ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: যেন দ্বিতীয় খাগড়াগড়। নৈহাটির মামুদপুরের বাজি কারখানার তীব্র বিস্ফোরণকে এভাবেই তুলনা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার দুপুরে কারখানায় মজুত বিস্ফোরক ফেটে এতটাই বড় আকারের বিস্ফোরণ ঘটায় যে কম্পন অনুভূত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। কারখানার ছাদ গিয়েছে উড়ে, এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪। এমন ভয়ঙ্কর ঘটনায় এনআইএ তদন্ত চেয়েছেন বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। তাঁর কথায়, ”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ টাকার বিনিময়ে বেআইনি বাজি কারখানাগুলোকে নিয়ে উদাসীন। তাই এমন ঘটনা ঘটল। এনআইএ ছাড়া কেউ এর যথাযথ তদন্ত করতে পারবে না। আমরা সেই তদন্তই দাবি করি।”
অর্জুন সিংয়ের দাবি মেনে মামুদপুরের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের তদন্তভার এনআইএ-কে দেওয়া হবে কি না, তা তো ভবিষ্যতই বলবে। কিন্তু শুক্রবারের ঘটনা তুলে দিয়েছে বহু প্রশ্ন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই বাজি কারখানাটি নিয়ে দীর্ঘদিনের আপত্তি তাঁদের। এক বছর আগেও এখানে দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই কারখানায় এলাকার মহিলাদের পাশাপাশি শিশুরাও কাজ করে বলেও অভিযোগ। প্রশাসন এ বিষয়ে উদাসীন বলেও মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পাশাপাশি, শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের প্রচ্ছন্ন আশকারায় যথাযথ পরিকাঠামো ছাড়াই কারখানাটি বছরের পর বছর ধরে চলছে বলেও অভিযোগ জানাচ্ছেন তাঁরা। তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এ বিষয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
শুক্রবারের ঘটনার পর এক মৃতের আত্মীয় জানিয়েছেন, ”দেহগুলো এমনভাবেই ঝলসে গিয়েছে যে কোনওটাই আলাদা করে চেনার উপায় নেই। না মুখ, না শরীরের অন্যান্য অংশ, না জামাকাপড় – কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আমি বৌদির হাতের শাঁখা-পলা দেখে চিনতে পারলাম।” কী মর্মান্তিক পরিস্থিতি! আগুন নেভাতে গিয়ে দমকল কর্মীদেরও হিমশিম দশা। এই প্রবল বিস্ফোরণের জেরে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সন্ধে পর্যন্ত তা বিস্তারিত জানা যায়নি। এর পিছনে আবার অনেকের সন্দেহ যে ইচ্ছা করেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ গোপনে রাখছে পুলিশ।
২০১৩ সালের অক্টোবরে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে এমনই এক তীব্র বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় অন্তত ২ জনের। সেই ঘটনার তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে হাতে পেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। সামনে এসেছিল জেএমবি জঙ্গিযোগ। বাড়িটি ভাড়া নিয়ে সেখানে অস্ত্র তৈরির কারবার চালাত ৪ জেএমবি জঙ্গি। ঘুণাক্ষরেও টের পাননি কেউ। মজুত করা বিস্ফোরক থেকেই সেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এখন মামুদপুরে বিস্ফোরণের তীব্রতা এবং ধরন খাগড়াগড়কে মনে করিয়ে দিচ্ছে। এখানেও কি তবে বাজি কারখানার আড়ালে এমন বিস্ফোরক তৈরির অবৈধ কারবার চলত? এই প্রশ্ন জাগছেই এলাকাবাসীর মনে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.