সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রানাঘাটের রানু এখন সোশ্যাল মিডিয়ার ‘সুরসম্রাজ্ঞী’। স্টেশনে গান গেয়ে ভিখাবৃত্তি করাই যার পেশা, তাঁর কণ্ঠে আপাতত মাতোয়ারা নেটিজেনদের আট থেকে আশি। ভিডিও ভাইরাল হতেই রাতারাতি তিনি তারকা হয়ে উঠেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর গান শুনে শ্রোতাদের মন তো ভিজেইছে, ইতিমধ্যেই রানুর কাছে ডাক এসে গিয়েছে সুদূর মুম্বই থেকেও। এবার বোধহয় অভাব অনটনের দিন ফুরল। ভাগ্যের চাবিকাঠি খুলে গেল রানুর। এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
কি, শুনে ‘রানু পেল লটারি’ গোছের বিষয় ঠেকছে তো? অবাক হলেও এমনটাই সত্যি। টেলিদর্শকদের কাছে ‘রানু পেল লটারি’ ধারাবাহিক বেশ জনপ্রিয়। এবার সোশ্যাল মিডিয়ার ‘সুরসম্রাজ্ঞী’ রানুর ক্ষেত্রেও সম্ভবত এমনটাই হতে চলেছে। রানুর গান শুনে ফোন আসছে সুদূর দিল্লি-মুম্বই থেকেও। ইতিমধ্যেই মুম্বইয়ের এক টেলিভিশন চ্যানেলের তরফে ফোন করে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে লতাকণ্ঠী রানুকে। দিল্লির একটি সমাজসেবী সংস্থা থেকেও যোগাযোগ করেছে তাঁর সঙ্গে। কিন্তু যার দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জোগাড় হয় না, তাঁর সঙ্গে কীভাবে দূরভাষে যোগাযোগ করা সম্ভব? ঠিক এখানেই এগিয়ে এসেছেন এক সহৃদয় ব্যক্তি। তিনি রানুর প্রতিবেশী তপন দাস। বাইরের রাজ্যগুলি থেকে তাঁর মোবাইলেই ফোন আসছে। রানাঘাটের এই ‘সুরসম্রাজ্ঞী’র গান শুনে মুগ্ধ তাঁরা। তাই তাঁদের কাজে ব্যবহার করতে চাইছেন রানু ওরফে রানু মারিয়া মণ্ডলের কণ্ঠ।
খ্যাতনামা সংস্থাগুলি থেকে ফোন আসছে তা অতি উত্তম। কিন্তু চাইলেই তো আর যাওয়া যায় না। রয়েছে কিছু বিধিনিষেধ। আর রানুর ক্ষেত্রে সেই সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর পরিচয়পত্র না থাকায়। সূত্রের খবর, নতুন যারা যোগাযোগ করছেন তাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি পরিচয়পত্র। রানুর কোনও পরিচয়পত্র না থাকায় বিমান বা দূরপাল্লার ট্রেনে টিকিট কাটা মুশকিল হয়ে পড়েছে। এছাড়াও, কোনও সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে গেলে কিংবা তাদের সঙ্গে কাজ করতে হলে পরিচয়পত্র থাকা আবশ্যক। আর সেখানেই বিপত্তি। তবে বিডিও এবং এসডিপিওর হস্তক্ষেপে রানুর এই সমস্যা কেটে যাবে বলেই মনে করেন রানাঘাটবাসীরা।
রানুর এক মেয়েও রয়েছে। নাম স্বাতী রায়। ৪ বছর হয়েছে মেয়েকে দেখেননি। তাঁর সঙ্গে নাকি কথাও হয়েছে মেয়ের। সে কথা দিয়েছে মাকে দেখতে আসবে। কিন্তু কবে আসবে, তা জানা নেই। একমাত্র মেয়ের পথ চেয়েই রানাঘাট স্টেশনে অপেক্ষারত রানু। গান গেয়ে রাতারাতি স্টার হয়ে গেলেও রানুর পা কিন্তু এখনও মাটিতে। সহজ-সরল হাসিমাখা মুখটি দেখে অনেকেই মায়ায় পড়ে গিয়েছেন। রানাঘাট স্টেশন চত্বরে এমন এক মহিলার দেখা পেয়ে সত্যিই তাজ্জব রেলযাত্রীরা৷ এক যাত্রীই ওঁর সঙ্গীত সাধনার ভিডিও তুলে শেয়ার করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারপর থেকেই ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ফোনে রেকর্ড করে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর গান। আর তিনি আপনমনে গেয়ে চলেছেন, ‘জিন্দেগি অউর কুছ ভি নহি, তেরি-মেরি কাহানি হ্যায়…’৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.