চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: ডাকাত দেখেছেন? আরাবল্লির নয় বাংলার! দুর্ধর্ষ সব ডাকাত আর তাদের কালীপুজোর গল্পগাথা অনেক শুনেছেন। তবে স্বচক্ষে সত্যিকারের ডাকাতের কালীপুজো দেখতে হলে চলে আসুন দীপান্বিতা অমাবস্যায়, আসানসোলে।
[ভাঙা মন্দির গড়তে এগিয়ে এলেন মুসলিমরা, ভাতারে উজ্জ্বল সম্প্রীতি]
বঙ্গদেশে এমন কোনও ডাকাত মিলবে না যিনি শাক্তধর্মের উপাসক ছিলেন না। সে রঘু ডাকাত হোক বা কালু ডাকাত। শাক্ত মতে, শক্তির দেবী কালিকার পুজো করতেন বাংলার ডাকাতরা। এও এক ডাকাত, যিনি ডাকাতি ছাড়লেও কালী পুজো করেন। এবং তা ঘটা করে। রত্মাকর দস্যুবৃত্তি ছেড়ে হয়েছিলেন ঋষি বাল্মিকি। এবার আসানসোলে কলির বাল্মিকির খোঁজ মিলবে, যিনি এখন ডাকাত থেকে সাধু হয়েছেন। সেই ডাকাত কালীর পুজো করেন স্বয়ং প্রাক্তন ডাকাত সর্দার। এই গোটা কর্মকাণ্ড চলে আসানসোলের জামুড়িয়ায়। যেখানে রয়েছে অধম বাবার আশ্রম। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কেন্দা যাওয়ার পথে পড়ে আশ্রমটি। কালো পোশাক, লাল তিলক, পক্ক কেশ-সহ দাড়িওয়ালা এক বাবাজির দেখা মিলবে আশ্রমের কালী মন্দিরে। ৭২ বছরে ওই বৃদ্ধের নাম অধম। স্থানীয়রা যাঁকে অধম বাবা বলে ডাকেন। শ্মশানকালীর ওই মন্দিরটি এলাকায় পরিচিত ডাকাত কালী নামে। কারণ এই অধম বাবা ছিলেন একদা ডাকাত দলের সর্দার। ভক্তদের প্রবচন শোনাবার সময় অতীতের ডাকাতির গল্প ঘটা করে বলেন অধমবাবা। তিনি কী পাপ করেছেন সেই প্রসঙ্গ টেনে এখন নীতি আদর্শ আর তত্বের কথা শোনান। অধম থেকে উত্তম হওয়ার সেই গল্পের টানেই বেড়ে চলেছে ভক্তকূলের সংখ্যাও। অধম বাবার নিজস্ব উক্তি “বেশ্যা না হলে নাকি তপস্বী হয় না। আর চোর না হলে সাধু হয় না।” আশ্রমে গেলেই দেখা মিলবে কালী মূর্তির পেছনে সাইন বোর্ডে বড় বড় করে হরফে লেখা “বেশ্যা সাধু, ডাকাত সাধু”।
[গরু পিছু ৫ হাজার! পাচারে হাত পাকাচ্ছে সীমান্তবর্তী পড়ুয়ারা]
অধম বাবার দাবি বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় এক সময় চুটিয়ে ডাকাতি করেছেন তিনি। যখন তিনি যৌবনে, তখন গৃহস্থ থেকে পোস্ট অফিসের মতো সরকারি দফতরেও দলবল নিয়ে হানা দিতেন। বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট চালিয়ে ১৪টি বন্দুক জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু ডাকাতি করতে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন এইভাবে অর্থ উপার্জন হলেও কেউ সুখী হতে পারে না। পাপের ফল না পরিবারের কাজে লাগে, না নিজের ভোগে। দল ছেড়ে ধরা দেন পুলিশের কাছে। জেলও খাটেন। তারপরই মন দেন তপস্যা, সাধনায়। সর্বদা পড়ে থাকতেন কালী মন্দিরে। ডাকাত দলে নাম লেখানোর আগে কীর্তনের দলে গান গাইতেন অধম। মন্দিরে বসে পুরনো অভ্যাস ঝালিয়ে নেওয়া শুরু হয়। ডাকাতি ছেড়ে অ্যাধ্যাত্মিকতায় চলে আসায় খুশি হন গ্রামের মানুষজন। জমি দান করে তারা অধমকে আশ্রম গড়তে সাহায্য করেন। অধম ডাকাত থেকে হয়ে যায় অধম বাবা। তখন থেকেই অধমের কালীর নাম হয়ে যায় ডাকাত কালী। সেই অধমের আশ্রমে দীপান্বিতা অমাবস্যায় ডাকাত কালীর পূজো হয় ধুমধাম করে। অধম বাবা সেই সময় বসেন পঞ্চমুন্ডির আসনে। ধ্যানের মধ্যে তিনি হয়তো নিজেকে শুদ্ধ করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.