রাজা দাস, বালুরঘাট: বেশকিছু কর্মী-সমর্থকদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ানোর অভিযোগ উঠল দলত্যাগী কংগ্রেস জেলা সভাপতি নীলাঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে৷ কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগদানের নয়া তথ্য সামনে আসতেই উত্তাল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার রাজনীতির আঙিনা৷
নীলাঞ্জনবাবুর ফাঁকা রেখে যাওয়া জেলা সভাপতির আসন পূরণ ও সাংগঠনিক ভিত অটুট রাখতে বালুরঘাটের জেলা কার্যালয়ে রবিবার জরুরি বৈঠক ডাকে কংগ্রেস৷ নীলাঞ্জন রায় ও কয়েকজন বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় কোনও প্রভাব দলে পড়েনি বলে দাবি স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের৷
জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে বালুরঘাটের একটি অনুষ্ঠানে বিজেপিতে যোগদান সভা চলে কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীর উপস্থিতিতে৷ দক্ষিণ দিনাজপুর কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নীলাঞ্জন রায় ও উত্তর দিনাজপুরের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা আব্দুল করিম চৌধুরি, তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি বিপ্লব মণ্ডল, সিপিএম থেকে নীরদ দাস-সহ বামফ্রন্ট ও তৃণমূল থেকে এক ঝাঁক নেতা কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন৷ সেখানে তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন বিজপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয় বর্গী, রাজ্য নেতা মুকুল রায়-সহ অন্যান্য রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব৷
বিজেপিতে যোগদানকারী কংগ্রেসত্যাগী নীলাঞ্জন রায় জানান, কংগ্রেসের বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রায় তিন হাজার কর্মী বিজেপিতে যোগদান করেছেন৷ নীলাঞ্জনবাবুর সেই দাবিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস৷ এমনকী কংগ্রেসের বহু কর্মী ও ব্লক নেতৃত্বকে মিথ্যা বলে বিজেপির যোগদান সভায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে৷ তবে, কর্মীরা সঠিক সময় সঠিক বিষয় বুঝতে পেরে সেই সভা থেকে সরে পড়েছে৷
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস প্রাক্তন সভাপতি তথা প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য স্বপন বিশ্বাস জানান, নীলাঞ্জন বাবু বিজেপিতে যেতে চলেছেন বলে দু’চার বার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায় বটে। তবে, তার সত্যতা স্বীকার করছিলেন না নীলাঞ্জন৷
শনিবার বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি কংগ্রেসের জেলা কার্যালয়ে থেকে নিজের কাজ করেছেন। শনিবার কংগ্রেসের কর্মসূচি আছে বলে তিনি সব ব্লকের ব্লক সভাপতি ও কর্মীদের বালুরঘাটে ডেকে আনেন৷ তখন পর্যন্ত তিনি জেলা সভাপতি হিসেবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন৷ তাই তার এই অভিসন্ধি কেউ বুঝতে পারেনি৷ ফলে, তাঁর কথামতো গুলমোহর অনুষ্ঠানগৃহে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসের বেশ কিছু সদস্য ও ব্লক ও টাউন সভাপতি৷ যাঁদের মধ্যে ছিলেন বালুরঘাট মহিলা টাউন সভাপতি রিনা মিত্র৷
কিন্তু সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, এটা কংগ্রেসের কোনও কর্মসূচি নয়। নীলাঞ্জন রায় বিজেপিতে যোগদান করবেন৷ তার সঙ্গে অন্য কংগ্রেস কর্মী ও নেতাদের তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ানোর চেষ্টা করেন৷ এরপরেই কংগ্রেসের অনান্যরা সেখান থেকে চলে যান।
এদিন জেলা কমিটির সকলকে নিয়ে বৈঠক করা হয়৷ সেখানে বর্ষীয়ান নেতা অঞ্জন চৌধুরিকে জেলা কংগ্রেস অস্থায়ী ভাবে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ তবে, স্থায়ী জেলা সভাপতি দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে তা স্থির করবে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি৷ এর জন্য তারা আবেদন জানিয়েছেন সর্বভারতীয় নেতৃত্বর কাছে৷
এআইসিসি সদস্য তথা সেবা দলের নেত্রী মাধবী গুহ জানান, তিনি যখন জানতে পারেন দলের কর্মী ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের মিথ্যা বলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিজেপির যোগদান কর্মসূচিতে, তখন তিনি ছুটে যান সেখানে৷ তার সঙ্গে ফিরে আসেন অন্তত ৫০ জন কংগ্রেস কর্মী ও কয়েকজন ব্লক নেতারা৷ দলত্যাগী নীলাঞ্জন বাবুর তাঁর কৌশল চালিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেননি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.