অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: বাঙালির হৃদয়ের দেবতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তবে পদবী ঠাকুর হলেও আদতে তিনি তো ঈশ্বর নন। তবু শিলিগুড়ির অদূরে ঠাকুরনগরে তাঁকে দেবতার আসনে বসিয়েই পুজো করা হয়। রীতিমতো ধূপকাঠি দেখিয়ে মন্ত্র পড়ে, প্রসাদ বিলি করে তাঁর পূজার্চনা করা হয়। সেখানে রোজ নিয়ম করে দু’বেলা কবিগুরু পূজিত হন। মঙ্গলবার কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী। কিন্তু এখন মানুষের মধ্যে উৎসাহ কমে যাওয়ায় আর সাড়ম্বরে কিছু করা হয় না সেখানে।
২০ বছর আগে ঠাকুরনগরে এই মন্দির তৈরি করেছিলেন শরৎচন্দ্র দাস। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি মারা যান। এরপর থেকে মন্দিরের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন স্বামী সুধাকৃষ্ণ দাস গোস্বামী মহারাজ। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় শরৎচন্দ্র দাস স্বপ্ন দেখেছিলেন যে কবিগুরু তাঁর কাছে পুজো চাইছেন। তারপর তিনি ঠাকুরনগরে ছোট্ট একটি মন্দির বানিয়ে কবিগুরুর ছবি দিয়ে পুজো করতেন। ধীরে ধীরে তাঁর শিষ্য বাড়তে থাকে। বানিয়ে ফেলা হয় একটা আস্ত মন্দির। পরবর্তীতে কবিগুরুর বড় একটি মূর্তি আনা হয় সেখানে। রবি ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী ও রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবসে সাড়ম্বরে পুজোর পাশাপাশি সেখানে মেলাও বসত। ব্যাপক ভিড় হত মন্দির ও মেলায়। বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ আসত সেখানে। কিন্তু এখন সেসব অতীত। এখন আর কেউ এই মন্দিরের খোঁজ খবর রাখে না। তবে নিয়ম করে কবিগুরুর পুজো কিন্তু চলছে।
দিনের পর দিন অবহেলায় মন্দিরের আশেপাশে জঙ্গলে ভরতি। যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি শুধু পুজোটাই করেন। দায়িত্বে থাকা স্বামী সুধাকৃষ্ণ দাস গোস্বামী মহারাজ বলেন, “আমি খালি পুজো করি রোজ দু’বেলা। আগে এখানে প্রতিদিন শিষ্যরা আসত। কিন্তু এখন আর কেউ আসতে চায় না। আর নতুন প্রজন্ম তো ঠাকুরকে চেনেই না! তাই এই জায়গাটা খাঁ খাঁ করে। এখন আর মেলা বসে না। আমি চলে গেলে এই মন্দির আদৌ থাকবে কি না জানা নেই।” তাঁর অভিযোগ, “মন্দিরের উন্নতির জন্য স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েও কোনওরকম সহযোগিতা পাইনি। স্থানীয় পঞ্চায়েতও সাহায্য করে না। মন্দির বাঁচাতে এদের সাহায্যের প্রয়োজন নইলে অচিরেই কবিগুরুর মন্দির নষ্ট হয়ে যাবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.