স্টাফ রিপোর্টার: পরপর দু’দিন দাপট দেখিয়ে অবশেষে দক্ষিণবঙ্গের উপর থাকা নিম্নচাপ দুর্বল হল। সরে গেল বাংলাদেশে। সোমবার বিকেল থেকে কলকাতার আকাশ মেঘমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা। তবে জেলায় বৃষ্টি হতে পারে। এমনটাই জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু আবহবিদরা অঙ্ক কষে দেখেছেন, এই সপ্তাহে ফের পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রকোপে পড়তে পারে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ। অর্থাৎ কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে জাঁকিয়ে শীত আসা ফের আটকে যেতে পারে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রকোপে।
কলকাতা থেকে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের ফৈজাবাদের আকাশে আবারও একটি পশ্চিমি ঝঞ্ঝা দেখা দিয়েছে। সেখানে ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে। যেটির উৎপত্তিস্থল ভূমধ্যসাগর। এই দুর্যোগের অভিমুখ ভারত। শক্তি সঞ্চয় করে দুর্যোগ পশ্চিমি ঝঞ্ঝার আকার নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্ত পার হয়ে উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ ঘুরে ফের বৃহস্পতি বা শুক্রবার নাগাদ দক্ষিণবঙ্গে হাজির হতে পারে। তাই সোমবার থেকে নিম্নচাপের বৃষ্টি কমলেও ফের এই সপ্তাহে ফের বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। সোমবার বিকেল থেকে বৃষ্টি কমবে। মেঘ সরে গিয়ে আকাশ পরিষ্কার হবে। তবে তাপমাত্রা এখনই কমার কোনও লক্ষণ নেই। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের উপ-মহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,“সোমবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হবে। বৃষ্টি কমবে। নিম্নচাপ বাংলাদেশে চলে গিয়েছে। তবে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে মাঝেমধ্যে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তাপমাত্রা কমার কোনও সম্ভাবনা নেই।”
রবিবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের আকাশ ছিল মেঘলা। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি কম। অন্যদিকে, সোমবার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকার কথা যথাক্রমে ২৬ ডিগ্রি ও ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। অর্থাৎ স্বাভাবিকের থেকে অন্তত ৫ ডিগ্রি বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৭ মিলিমিটার। এই নিম্নচাপের কারণেই জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ছে না দক্ষিণবঙ্গে। বারবার ধাক্কা খাচ্ছে উত্তরে হাওয়া।
তবে আজ থেকে আকাশ পরিষ্কার হবে। দিন দুয়েক তাপমাত্রা খানিকটা কমার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। বিশেষত, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূমও পশ্চিম মেদিনীপুরে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে বৃহস্পতিবার থেকে ফের আকাশ মেঘলা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে কলকাতা-সহ দক্ষিনবঙ্গের সব জেলায়। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের এক শীর্ষকর্তার কথায়, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ঠান্ডা হাওয়া হিমালয় পাদদেশ হয়ে আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে উত্তর ভারত হয়ে ক্রমশ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে প্রবেশ করে। এবার তেমন পরিবেশ তৈরি হলেও নতুন করে যে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তার ফলে এই সপ্তাহে জাঁকিয়ে শীত পড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে ডিসেম্বর মাসের মাঝ বরাবর পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টি হয়। আকাশ মেঘলা থাকে। তবে বৃষ্টি কমে আকাশ পরিষ্কার হলেই জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ে। তাই এবারও সম্ভবত তার ব্যতিক্রম হবে না। জাঁকিয়ে শীতের জন্য এখনও অপেক্ষা করতে হবে বাঙালিকে। তবে শীতের সব উপাদান কিন্তু মজুত। বাজারে যেমন অঢেল সবজি। তেমনই নলেন গুড়, পাটালি আর জয়নগরের মোয়া বিক্রি হচ্ছে দেদার। কিন্তু ডিসেম্বরের ভরসন্ধ্যায় পুরোহাতা সোয়েটার এখনও ভরসা করে বড় একটা কেউ আলমারি থেকে নামাচ্ছেন না। কারণ একটাই, প্রকৃতির মতিগতি বোঝা ভার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.