চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: মনের কথা বুঝে কঠিন সমস্যার সমাধান করে দিল প্রযুক্তি৷ আর এভাবেই মোবাইল অ্যাপ ‘টেলিগ্রাম’-এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল আসানসোলে৷ প্রেমে আপত্তি ছিল পরিবারের৷ তাই তা আটকাতে মেয়েকে ঘরবন্দি করে দেন পরিবারের সদস্যরা৷ মোবাইলের সিম খুলে, সমস্তরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে চেষ্টা চলে প্রেমের সম্পর্কটি ভেঙে দেওয়ার৷ কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হলো না। বন্দিনী প্রেমিকাকে মুক্ত করে নিয়ে গেল প্রেমিক সাম্যব্রতী।
মোবাইল অ্যাপ ‘টেলিগ্রামে’র সাহায্যেই মুশকিল আসান। সিম ছাড়াই মোবাইল থেকে ওই অ্যাপটি ব্যবহার করা যায়৷ আর সেই কৌশলেই নিজেদের প্রেমের বৃত্ত পূর্ণ করলেন সুমনা-সাম্যব্রতী৷ পুরুলিয়ার বাসিন্দা সুমনা মাজি, বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী৷ তাঁর সঙ্গে রসায়নের শিক্ষক সাম্যব্রতীর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়৷ সেকথা জানতে পেরে সম্পর্কে আপত্তি জানায় সুমনার পরিবার৷ মোবাইল থেকে সিম বের করে নিয়ে তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়৷ কিন্তু ‘টেলিগ্রাম’ অ্যাপটি সিমবিহীন অবস্থাতেও ব্যবহার করা যায়৷ তা ব্যবহার করেই সমস্ত অত্যাচারের কথা সুমনা জানান সাম্যব্রতীকে। তারপরই পুরুলিয়ার সুমনা মাজির বন্দিদশা কেটে বিয়ে হলো ভালোবাসার রাজকুমার সাম্যব্রতী সরকারের সঙ্গে। আর জট কাটাতে সাম্যব্রতীকে সাহায্য করলেন মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য ও পুলিশ প্রশাসন। বৃহস্পতিবার আদালতে রেজিস্ট্রির পর মন্দিরে দু’জনের চার হাত এক হল।
আসানসোলের চিত্তরঞ্জন দেশবন্ধু কলেজের কেমিস্ট্রির শিক্ষক সাম্যব্রতী সরকার। এই মূহূর্তে তিনি আসানসোল কলেজিয়েট স্কুলেরও বিজ্ঞানের শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে পুরুলিয়ার রামকানালীর আটুমাঝারডিহি গ্রামের সুমনা মাজির প্রেমের সম্পর্ক চার বছরের। বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসির ছাত্রী সুমনা দিন কয়েক আগে গ্রামের বাড়িতে ফিরলে, তাঁকে বন্দি করে রাখা হয় বলে অভিযোগ৷ সুমনা জানান, সেকেন্ড সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরুর কথা জানানোর পরেও তাঁকে ছাড়া হয়নি৷ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও চালানো হয়৷ সুমনা বুঝতে পারেন, তাঁকে উদ্ধার করতে পারেন একমাত্র সাম্যব্রতীই৷ কিন্তু ফোন তো কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷ তাই ফোন করার উপায় নেই৷ সুমনা জানান, ‘মোবাইল ফোনে অনেক স্টাডি ডকুমেন্টস আছে বলে কোনওক্রমে সেটটি পাওয়ার চেষ্টা করি। সিম খুলে আমাকে সেটটি দেওয়া হয়। এরই মধ্যে একদিন ফ্রি ওয়াই-ফাই পেয়ে টেলিগ্রাম অ্যাপসের সাহায্যে সমস্ত ঘটনার কথা জানিয়ে দিই সাম্যব্রতীকে। তারপরেই সাম্যব্রতী হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল ও পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য নেয়। প্রবল বাধার মুখ থেকে আমাকে উদ্ধার করেন তাঁরা।’
মানবাধিকার সংগঠনের চেয়ারম্যান বুম্বা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ওই শিক্ষক সমস্যা জানানোর পর আমরা উদ্যোগ নিই। দুজনের উচ্চশিক্ষিত প্রাপ্তবয়স্ক ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল৷ তাই তাঁদের পাশে দাঁড়াতে কোনও আইনি বাধা ছিল না। আমরা আমাদের স্থানীয় কর্মীদের সাহায্য নিয়ে বাড়ি গিয়ে সুমনাকে উদ্ধার করি।’ বৃহস্পতিবার রঘুনাথপুর থানার পুলিশের সাহায্য নিয়ে ওঁদের রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়। তারপর ওইদিন রাতেই ঘাঘরবুড়ি মন্দিরে বিয়ে দেওয়া হয় সুমনা-সাম্যব্রতীর। নবদম্পতির কথায়, ‘টেলিগ্রাম’ অ্যাপ আর মানবধিকার কাউন্সিলের বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরেই জয় হল তাঁদের ভালবাসার৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.