ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: করোনা সংক্রমণ আটকাতে লকডাউন। দিনের পর দিন যোগাযোগ বন্ধ। এমনকী, অনেক সময় ফোনেও বাড়ির সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় ভিনরাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবার, ওষুধ ও মাথা গোঁজার জায়গা করে দেওয়ার পাশাপাশি মন খুলে কথা বলারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকী, মানসিকভাবে বিপর্যস্তদের চাঙ্গা করে তুলতে শুরু হয়েছে টেলি কাউন্সেলিং।
ভিনরাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা জানতে শ্রম দফতর ইতিমধ্যেই সব জেলাকে নির্দেশ দিয়েছে। সেই কাজ শুরুও হয়েছে বলে শ্রম দফতর সূত্রে খবর। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ও উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফে দেশের বিভিন্ন জেলায় আটকে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁরা যে জায়গায় আটকে আছেন, সেই এলাকার স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে খাবার, ওষুধ, বাসস্থানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, দিনের পর দিন একটা জায়গা আটকে থাকার ফলে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি হতে পারে। সেই সমস্যা আটকাতেই এই টেলি কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার প্রায় সাড়ে সাত হাজার শ্রমিক গোটা দেশে ছড়িয়ে রয়েছেন। তথ্য বলছে, লকডাউনের জেরে জেলার সবচেয়ে বেশি শ্রমিক আটকে রয়েছেন কেরালায়। প্রায় ১,৮৮৬ জন। তারপরই মহারাষ্ট্রে প্রায় ৯৪৭ জন। দিল্লিতে আটকে আছেন প্রায় ৩৯৩ জন। এটা যেমন একদিক তেমনই পুদুচেরিতে আটকে আছেন মাত্র ১১ জন শ্রমিক। দক্ষিন চব্বিশ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফে এই শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই সব রাজ্যের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের খাবার, ওষুধ ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, চার জন কাউন্সেলর এবং আট জন প্রশিক্ষককে এই কাজে যুক্ত করা হয়েছে। ফি দিন দিনে দু’বার টেলি কনফারেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন এই কর্মসূচি চলবে।
জেলাশাসক পি উলগানাথন এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “ভিনরাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গিয়েছে, অনেকেই বাড়ি ফিরতে না পেরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাঁরা আত্মীয়—পরিজনদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন। এই অবস্থায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের মনের জোর ফিরিয়ে দেওয়াটাই মূল লক্ষ্য ছিল। তাই টেলি কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।” জেলাশাসকের কথায়, “বিভিন্ন হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কাউন্সেলর ও প্রশিক্ষকদের এই কাজে যুক্ত করা হয়েছে। জেনে ভাল লেগেছে এই ধরনের টেলি কাউন্সেলিংয়ের পর অনেকেই খুশি। তাঁরা যে একা নন। রাজ্য সরকার যে পাশে রয়েছে এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন আটকে থাকা রাজ্যের গরীব মানুষ।
দক্ষিণের মতো উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফে পরিযায়ী শ্রমিকদের একই ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই তথ্য জানিয়ে উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলাশাসক চৈতালী চক্রবর্তী বলেছেন, “পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁরা হতাশা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.