রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: করোনা মোকাবিলায় শ্রেষ্ঠ কর্মীদের পুরস্কার ঘোষণা করল তেহট্ট-২ ব্লক প্রশাসন। বেশ কিছুদিন থেকে বার্নিয়া কাণ্ড-সহ সমগ্র ব্লকে অস্থায়ী কর্মীরা জীবন বিপন্ন করে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করে চলেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদেরকে ‘কোভিড হিরো’ পুরস্কার দেবে তেহট্ট-২ ব্লক প্রশাসন।
বেশ কিছুদিন আগে পলাশীপাড়া থানার বার্নিয়ায় পাঁচজনের করোনা ভাইরাস পজিটিভ আসে। এর পরেই ওই এলাকায় বিশেষত শ্রীকৃষ্ণপুর-সহ সমগ্র মহাকুমার চার ব্লক এলাকাতে কড়া নজরদারি শুরু করে পুলিশ, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তর। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, রোগ প্রতিরোধের লড়াইয়ে বর্নিয়ার শ্রীকৃষ্ণপুর-সহ সংলগ্ন গ্রামগুলোতে সর্বক্ষণ যাঁদের নজরে পড়ছে, তাঁরা ব্লকের বিভিন্ন বিভাগের চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী কর্মী। এলাকার মানুষের বক্তব্য, করোনাভাইরাস রুখতে সর্বত্রই উচ্চ আধিকারিকের নাম প্রকাশ্যে আসছে। কিন্তু খাতায় কলমে থেকে যাচ্ছেন সর্বক্ষণ পরিশ্রমের পাশাপাশি পরিষেবা দেওয়া ব্লক স্তরের অস্থায়ী কর্মীরা। করোনা যুদ্ধে লড়াই করতে তাঁরা সচেতনতা মূলক প্রচার, ব্যাংকের ভিড় যাতে না হয় তা দেখা, এলাকা জীবাণু মুক্ত করার কাজ, অফিসের কাজ, ত্রাণ বিতরণ, পাইকারি ও ন্যায্য মূল্যের দোকান, ওষুধের মূল্য সঠিকভাবে নেওয়া হচ্ছে কিনা তার খুঁটিনাটি খোঁজ রাখা, হাসপাতাল ও কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের খাওয়ানো ইত্যাদিও তাঁরা সর্বক্ষণ করে চলেছেন। এই অস্থায়ী কর্মীদের কাজকর্মে খুশি হয়ে ব্লক প্রশাসনকে গ্রামবাসীরা ধন্যবাদ জানিয়েছেন। যে কারণে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হলে তাদের ‘কোভিড হিরো’ পুরস্কারে পুরস্কার দেওয়া হবে বলে তেহট্ট-২ ব্লক প্রশাসন ঘোষণা করেছে। বিশেষত অস্থায়ী কর্মী হিসেবে স্বনিযুক্তি প্রকল্প, গ্রাম রোজগার সেবক এবং আবাস যোজনার ফেসিলেটর, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর দের মত অস্থায়ী কর্মীদের পুরস্কৃত করা হবে।
বার্নিয়ার শ্রীকৃষ্ণপুর এলাকা স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করে যেদিন থেকে নজরদারি শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই এলাকার মানুষদের কথা চিন্তা করে এগিয়ে এসেছেন এই সব অস্থায়ী কর্মীরা। দিনরাত পরিশ্রম করছেন তেহট্ট-২ ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্ত দপ্তর, আবাস যোজনা, গ্রাম রোজকার সেবক, গ্রামীন সম্পদ কর্মীদের মত ১১জন চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী কর্মী। তেহট্ট-২ ব্লকের, স্বনিযুক্তি প্রকল্পের পরিদর্শক অতীশ লাহা জানান, “সকালবেলায় বেরিয়ে শ্রীকৃষ্ণপুর এলাকায় প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে দৈনিক নজরদারি চালাতে হয়। প্রত্যেক মানুষকে সচেতন করা, যাতে তারা বাড়ির বাইরে না বের হয়। ওই এলাকার দুস্থ মানুষদের খোঁজ রাখা, যাঁরা খেতে পারছেন না, তাঁদের অবিলম্বে খাবার পৌঁছে দেওয়া- এই কাজ সকাল থেকে রাত অবধি করতে হচ্ছে।” গ্রাম রোজগার সেবক সৌভিক পাল এবং আবাস যোজনার ফ্যাসিলেটর শুভেন্দু পাল জানান, “প্রত্যেক বাড়িতে খাদ্যদ্রব্য দুধ ঔষধ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই। এছাড়া পাইকারি বিক্রেতারা বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ওষুধের মূল্য সঠিক নিচ্ছেন কিনা সেটাও সর্বক্ষণ তদারকি করতে হয়। হাসপাতালে স্বাস্থ্য কর্মীদের খাবার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমরা নিজেরাই নিয়েছি।” ব্লকের এক অস্থায়ী কর্মী উজ্জল মণ্ডল বলেন, “ঝড়ের দুর্যোগের সময় কান্ডারি যদি ঠিক হাল ধরেন তবে নৌকো উলটায় না। আমাদের ব্লকের বিডিও শুভ সিংহ রায় বাবুর মত কান্ডারি পেয়ে আমরা সকলে উৎসাহের সঙ্গে COVID-19-এর বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.