চমকপ্রদ উদ্ভাবনী শক্তি ও মেধার জন্য গত বছর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল অভিজ্ঞান দাস।
সুমন করাতি, হুগলি: অবশেষে দিল্লির কুচকাওয়াজে বিশিষ্ট অতিথির স্বীকৃতি নিশ্চিত হল হুগলির কিশোর বিজ্ঞানী অভিজ্ঞান দাসের। বউ বা একা নয়, বাবা-মায়ের সঙ্গেই ২৫ জানুয়ারি দিল্লির বিমান ধরবে ১৬ বছরের অভিজ্ঞান। চুঁচুড়ার এই কিশোর বিজ্ঞানীর ইচ্ছের কাছে সিদ্ধান্ত বদল করল কেন্দ্রীয় সরকার।
সম্প্রতি ভারত সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক থেকে আমন্ত্রণপত্র পেয়েছিল অভিজ্ঞান। বিশিষ্ট অতিথি হিসাবে দেশের অন্যান্য সেরা বিজ্ঞানী এবং আবিষ্কারকদের সঙ্গে এক সারিতে বসে দিল্লিতে সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ দেখার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। অভিজ্ঞানকে বলা হয়েছিল, আগামী ২৬ জানুয়ারি দিল্লির কর্তব্যপথে বিশিষ্ট অতিথির আসন গ্রহণ করতে। তবে একটা শর্ত ছিল। সপত্নীক আসতে হবে। অভিজ্ঞান আমন্ত্রণ পত্রের প্রাপ্তি স্বীকার করে গত ১২ জানুয়ারি মন্ত্রককে জানিয়েছিল, ”আমার বয়স এখন ১৬, কোনও পত্নী নেই। তাই আমি মা-বাবার সঙ্গে যেতে চাই। আপনাদের কাছে এই ‘পত্নী না’ থাকার বিষয়টা বিবেচনা করার জন্য জানালাম। অনুরোধ রাখলাম যে আপনারা আমাকে আমার মা এবং বাবাকে সঙ্গে নিয়ে যাবার অনুমতি দিন।” কিন্তু নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। অভিজ্ঞানকে যেতে গেলে হয় বউ-সহ যেতে হবে। অন্যথায় একাই যেতে হবে। এর পর সংবাদ প্রতিদিন ডট ইনে খবরটি প্রকাশিত হয়। সমস্ত মহলে নিন্দা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের ঝড় ওঠে। খবরটি ভাইরাল হয় সমস্ত সামাজিক মাধ্যমেও।
এমনকি তার যেতে না পারার খবর প্রকাশের পর দিল্লির একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের বাঙালি আধিকারিকদের মধ্যেও হতাশা ও ক্ষোভ দেখা যায়। তাঁরাও তাদের সোশাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ ও বিস্ময় জানাতে থাকেন। এর পরেই নড়ে চরে বসে দিল্লির কেন্দ্র সরকার। খোঁজখবর শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। কি করে একজন বিশিষ্ট অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত ১৬ বছরের কিশোরের “বউ না থাকার” কারণে একা দিল্লি যাত্রা সম্ভব নয়? দিল্লি থেকে বাংলার অলিগলিতে ওঠা এই নিন্দা ও বিদ্রুপের প্রভাবে শেষে মাথা নত করতে বাধ্য হয় কেন্দ্র সরকার। গতকালই অভিজ্ঞানকে ফোন করে অভিভাবক-সহ দিল্লি যাওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়। ওই দিনেই কুচকাওয়াজের পর, মন্ত্রীরদের সঙ্গে এক বিশেষ চা চক্র ও দিল্লি শহর ঘুরে দেখানোরও ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রক।
এনিয়ে অভিজ্ঞান জানিয়েছে, ” দিল্লি সাধারণতন্ত্র দিবসে বিশিষ্ট অতিথির আসন গ্রহণ, সঙ্গে মন্ত্রী মহাশয়দের সঙ্গে চা-চক্রে অংশগ্রহণ এবং সংক্ষিপ্ত দিল্লি ভ্রমণের সুযোগে আমি গর্বিত।” অভিজ্ঞানের মা প্রিয়াঙ্কাদেবী জানান, “অবশেষে পুত্রের ন্যায় সঙ্গত ইচ্ছার কাছে কেন্দ্র সরকার সম্মতি দিল। এতে আমরা সন্তুষ্ট। অভিজ্ঞানের এই যাত্রা নিয়ে আমরা কোনও বিতর্ক চাইনি। হঠাৎই অযৌক্তিক কারণে এমন বিরল স্বীকৃতি নষ্ট হতে বসেছিল। আমরা সকল শ্রেণীর মানুষকে আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। অভিজ্ঞানের এই সাফল্য শুধু তার নয় এই বাংলার সমস্ত মানুষের।” পাশাপাশি তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন সংবাদ প্রতিদিন ডট ইনকে। স্বাভাবিকভাবেই, শেষ মুহূর্তে দিল্লি যাত্রা নিশ্চিত হওয়াতে খুশির হাওয়া চুঁচুড়া নারকেল বাগানের দাস পরিবারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.