ফাইল ছবি
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ‘টিনেজ প্রেগন্যান্সি’ অর্থাৎ অপ্রাপ্তবয়স্কদের সন্তানসম্ভবা হওয়ার ঘটনা বাড়ছে পূর্ব বর্ধমানে। বুধবার বর্ধমানে বেসরকারি সংগঠনের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম। এদিন শহরের তিনকোনিয়া এলাকায় একটি সভাকক্ষে ওই অনুষ্ঠানে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘টিনেজ মহিলাদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা খুবই উদ্বেগের। একজন মহিলার ন্যূনতম ১৯ বছরের বেশি বয়স না হলে সন্তান ধারণ ও প্রসবের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা ও বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।’’ এই ধরনের ঘটনা বৃদ্ধির জন্য সামাজিক মাধ্যমের কুপ্রভাবের কথাও উল্লেখ করেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
স্বাস্থ্য দপ্তরের ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলার প্রায় ২৯ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বাই টিনেজ ছিলেন। তার মধ্যে ১৬.৪ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা ১৮ বছরের নীচে যাঁরা হয় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন বা বাবা-মা লুকিয়ে নাবালিকার বিয়ে দিয়েছিলেন। করোনা পরবর্তী সময়ে এই প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। এই প্রবণতা রুখতে সচেতনতাকে হাতিয়ার করলেও সেইভাবে ফল মিলছে না। জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এই বিষয়ে আরও সচেতনতায় জোর দিতে বলেছেন। অপ্রাপ্ত বয়সে সন্তানধারণ করলে মা ও সন্তান দুজনেরই জীবনের ঝুঁকি থেকে যায়। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘নাবালিকারা পালিয়ে গিয়ে বা তার পরিবারের লোকেরা লুকিয়ে বিয়ে দিয়ে দিলে তারা কম বয়সেই সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ছে। তারা যখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আসছে তখন আমাদের কিছু করার থাকছে না। এটা সত্যিই আমাদের কাছে উদ্বেগের আর চিন্তারও।’’
[আরও পড়ুন: কাকভোরে বাদশা-বন্দনা, ‘ডাঙ্কি’র শোয়ে হলে পুড়ল দেদার আতসবাজি, ‘লুট পুট গয়া’ শাহরুখ ভক্তরা]
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, এই ধরনের ঘটনা সব থেকে বেশি হচ্ছে ভাতার, কেতুগ্রাম-১ও ২, পূর্বস্থলী-১ ও ২ সহ কয়েকটি ব্লকে। জেলার শিশু, নারী ও সমাজকল্যাণ দপ্তরের আধিকারিক সৌরভ কোলে জানান, করোনার সময়ে খুবই বেড়ে গিয়েছিল টিনএজ প্রেগন্যান্সি। ধারাবাহিক প্রচার ও সচেতনতার কর্মসূচির ফলে ২০২২ সালে সেটা ২৯ শতাংশে নেমেছে। চলতি বছরে সেটা ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২৪ সালের মধ্যে ৫ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। পালিয়ে গিয়ে কোনও নাবালিকা বিয়ে করলে সমাজকল্যাণ দপ্তরও তা আটকাতে পারছে না। তাদের বাবা-মায়েরাও অনেক ক্ষেত্রে পালিয়ে বিয়ে করলে জানতে পারছেন না কোথায় চলে গিয়েছে। যখন জানা যাচ্ছে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। এদিন বর্ধমানে নার্সিংহোম সংগঠনের ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন ডেপুটি সিএমওএইচ সুবর্ণ গোস্বামী, জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায়, বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস প্রমুখ। সুবর্ণ গোস্বামী শহরের বুকে ও শহর সংলগ্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি নার্সিংহোম গজিয়ে ওঠা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরিষেবার অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.