সৌরভ মাজি, বর্ধমান: খাতার পাতায় পাতায় প্রেমিককে উদ্দেশ্য করে রক্ত দিয়ে লেখা, ‘আই লাভ ইউ সুজয়। আমি তোমাকে কোনওদিন ভুলতে পারব না। আমি সত্যিই তোমাকে ভালবাসি।’ প্রেমিককে শেষ বার্তা দিতে ব্লেড দিয়ে হাতের শিরা কেটেছিলেন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। সেই রক্ত দিয়েই খাতার পাতা ভরিয়েছিলেন। প্রেমিকের বিয়ে আটকাতে পারেননি। প্রেমিকের ফুলশয্যার দিন তাঁর উদ্দেশে নিজের মনের হতাশা জানিয়ে বন্ধুবান্ধবদের সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিয়ে আত্মঘাতী তরুণী। গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই ছাত্রী।
[পায়রা চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে যুবকের মৃত্যু, এলাকায় উত্তেজনা]
চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার দেবপুর গ্রামে। কাবেরী লাহা (১৮) নামে ওই ছাত্রীকে সোমবার বিকেলে বাড়িতেই ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের লোকজন। তাঁকে উদ্ধার করে মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। গন্তার বিএম হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিল কাবেরী। মঙ্গলবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের সময় এসেছিলেন মৃতের বাবা নিমাই লাহা। তিনি জানান, মেমারির বাসিন্দা সুজয় নামে এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। ওই যুবক তাঁর মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করে অন্য একজনকে বিয়ে করে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তাঁর মেয়ে। সেই কারণেই তাঁর মেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় সুজয়ের। এরপরই মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েন কাবেরী। প্রেমিকের এই বিয়ে মন থেকে মেনে নিতে পারেননি ওই ছাত্রী। রবিবার রাতে বাড়িতেই নিজের হাতের শিরা ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলেন তিনি। রক্ত দিয়ে একের পর এক চিঠি লেখেন প্রেমিক সুজয়কে উদ্দেশ্য করে। প্রেমিকের বিয়ের সিদ্ধান্ত তাঁকে কতটা আঘাত করেছে তা ফুটে ওঠে তাঁর লেখায়। তাঁর মোবাইলেও বেশ কিছু ছবি মিলেছে। সেখানেও প্রেমিকের প্রতি তাঁর গভীর ভালবাসা ও প্রত্যাখ্যাত হয়ে মানসিক যন্ত্রণার বার্তা ফুটে ওঠে ছবির সঙ্গে বিভিন্ন ক্যাপশনে। পরিবারের লোকজন অবশ্য আঁচ করতে পারেননি এমন চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কাবেরী। সোমবার বিকেলে প্রেমিকের প্রতি লেখা সেইসব খাতার পাতার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বন্ধুদের পাঠান কাবেরী। জানিয়ে দেন, সুজয়কে ছেড়ে থাকতে পারবেন না তিনি। তাই চিরবিদায় নিচ্ছেন।
[চটুল গানের সুরে স্বল্পবসনাদের নাচ, তাল কাটল শান্তিপুরের ভাঙারাসে]
এর কিছু পড়েই বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়েন ওই ছাত্রী। পরিবারের লোকজন জানতে পেরে তাঁকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতালের চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন ওই ছাত্রীকে। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এদিন রাত পর্যন্ত পুলিশে কোনও লিখিত অভিযোগ অবশ্য হয়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.