ধীমান রায়, কাটোয়া: কাটোয়ার একাইহাটে সদ্য মা হারা হনুমান শাবককে পরম স্নেহে লালনপালন করছে দশম শ্রেণির ছাত্রী ভবানী মণ্ডল। নিজের হাতে রোজ নিয়ম করে তাকে দুধ খাওয়াচ্ছে ওই ছাত্রী। দুদিন স্কুলেও যেতে পারেনি সে। তবে ভবানী চায় কিছুটা সুস্থ ও স্বাভাবিক করার পর যেন এই হনুমানটির দায়িত্ব নেয় বনদপ্তর।
রবিবার কাটোয়ার খাজুরডিহি পঞ্চায়েত এলাকার একাইহাটে বিকেল তিনটে নাগাদ একটি সরষে খেতে সন্তানকে কোলে নিয়ে খাবারের সন্ধানে গিয়েছিল একটি হনুমান। ছোট্ট শাবককে নিয়ে সরষে খেতে চড়ে পাতা খাচ্ছিল হনুমানটি। তখন দুটি কুকুর তেড়ে যায় শাবকটির দিকে। কিন্তু ঢালের মতো নিজের শরীরটা ব্যবহার করে বাঁচায় নিজের সন্তানকে। কুকুরের হামলায় প্রাণ যায় মায়ের। শাবকটি থাকে অক্ষত। তারপর স্থানীয়রা দেখতে পান মৃত মায়ের শরীর আঁকড়ে ধরে কেঁদেই চলেছে হনুমান শাবকটি। কোনওমতেই মায়ের দেহ ছাড়েনি সে। এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য নাড়া দিয়েছিল সকলকে। শেষে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলাই মণ্ডল হনুমান শাবকটিকে উদ্ধার করে নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন। এই খবর ‘সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন’-এ সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়।
[নিথর মা’কে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা, বেদনার প্রতিচ্ছবি কাটোয়ায়]
একাইহাটের বাসিন্দা বলাইবাবু পেশায় হকার। তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে বিশ্বরুপ একটি ওষুধের দোকানে কাজ করেন। মেয়ে ভবানী চরপাতাইহাট উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ে। বলাইবাবুর স্ত্রী নমিতাদেবী বলেন, ”এই হনুমান শাবক এখনও নিজের হাতে খেতে শেখেনি। দুধ ছাড়া কিছু খাচ্ছে না। প্রথম দিনে নিয়ের পর থেকে কেবল গাছের দিকে তাকিয়ে মাকে খুঁজছিল। এখন কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে। তবে আমার মেয়ে ছাড়া কারও হাতে খাচ্ছে না। ভবানী আদর করে হনুমান শাবকটির নাম রেখেছে বীরু। কিনে দেওয়া হয়েছে গরম পোশাক। ভবানী বলে, ”আমায় বাড়িতে দেখতে না পেলে বীরু চিৎকার করছে। তাই দুদিন ওকে ছেড়ে স্কুলে যেতে পারিনি। একটু বড় হলে হয়তো নিজেই কোথাও চলে যাবে। কিন্তু এই অবস্থায় বীরুকে ছাড়ি কী করে?” কাটোয়া মহকুমা বন আধিকারিক সুকান্ত ওঝা বলেন, ”একাইহাটে গিয়ে খোঁজ নেব। তারপর হনুমানের শাবকটিকে উদ্ধার করে যথাযথ ঠিকানায় পাঠানো হবে।”
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.