দীপঙ্কর মণ্ডল: অদ্ভুত সেই বয়স। শরীরে-মনে দোলাচল। নাম বয়ঃসন্ধি। কেউ দিশাহারা, কেউ বেপথু। সরল এক ঔদ্ধত্য। কিছু ভাল না লাগা। হঠাৎ প্রেমে পড়া। এমন কত কিছুই। বাংলার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও সুরক্ষিত করতে উদ্যোগী হল স্কুলশিক্ষা দপ্তর। ১৭ থেকে ২১ ডিসেম্বর বালুরঘাটে প্রশিক্ষণ শিবির। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক প্রতিনিধিরা থাকবেন। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এবং সমগ্র শিক্ষা মিশন প্রশিক্ষণের বই তৈরি করেছে। অত্যন্ত আধুনিক ও প্রয়োজনীয় বইটিতে ঠাঁই পেয়েছে ‘বয়ঃসন্ধিকাল’। ‘যৌনতৃপ্তি’র মত সাহসী শব্দও আছে বইতে।
[পরীক্ষায় বসতে বাধা পড়ুয়াদের, রাতভর অধ্যক্ষকে ঘেরাও সিটি কলেজে]
ক্লাসে বয়ঃসন্ধির সমস্যা ও প্রতিকারের কথা বলার আগে এই বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নিয়মনীতি, শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতার পাঠ দেওয়ার পাশাপাশি বন্ধুর মতো মিশতে হবে পড়ুয়াদের সঙ্গে। বয়ঃসন্ধির সমস্যাগুলি যে অত্যন্ত স্বাভাবিক তা জানাতে হবে। শিক্ষকরা কিশোর পড়ুয়াদের বোঝাবেন, এই বয়সে নানা ইচ্ছা তৈরি হয়। তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সবার জীবনেই এই বয়স আসে। শিক্ষক বা শিক্ষিকা নিজেও যে এই বয়স পেরিয়ে এসেছেন এবং সমস্যার মোকাবিলা করেছেন তা জানাবেন। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়ারা অন্য বহু বিষয়ের সঙ্গে যা জানবে, তা হল- মেয়েদের ১১ বছরে এবং ছেলেদের ১৩ বছরে বয়ঃসন্ধিকাল শুরু। ছয় বছর পর্যন্ত থাকে এর মেয়াদ। কৈশোরের আট রকমের চাহিদার কথা শেখাবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সক্রিয়তা, স্বাধীনতা, সামাজিক, নতুন জ্ঞান, নীতিবোধ, জীবনাদর্শ গড়া, আত্মনির্ভরতা এবং যৌনতৃপ্তির কথা বলতে হবে ক্লাসে। এই বিষয়গুলিতে সবাই সহজ এবং আড়ষ্টহীন নাও থাকতে পারেন বলে মনে করছে স্কুলশিক্ষা দপ্তর। উদাহরণ হিসাবে যৌনতৃপ্তির কথা উল্লেখ করেছেন এক আধিকারিক। কোনও ছাত্র বা ছাত্রী যৌনতৃপ্তি কী তা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারে। শিক্ষক বা শিক্ষিকা যদি বিরক্ত হন, তাহলে পড়ুয়াদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে।
[চলন্ত বাসে মহিলাকে দেখে হস্তমৈথুন, যুবককে মেরে পুলিশে দিলেন নির্যাতিতা]
স্কুলশিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আগামী প্রজন্মকে বেশি করে স্বাস্থ্য সচেতন করতে স্কুলের সিলেবাস সংস্কার করা হয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে মূল্যবোধ ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের পাঠ দিতে চায় সরকার।” অসাবধানী যৌন সংসর্গের ফলে যে বিভিন্ন অসুখ হতে পারে সেই পাঠও পাবে ছাত্রছাত্রীরা। প্রত্যেকটি ক্লাসের ‘স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা’ বই ঢেলে সাজানো হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির বইতে বলা হয়েছে, ‘একজন আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে অপর একজনের যৌন কার্যকলাপের ফলে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে’। বস্তুত বয়ঃসন্ধিতে অনেকেই ভুল করে ফেলে। যার জের বয়ে বেড়াতে হয় গোটা জীবন। স্কুলশিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছে, সচেতন নাগরিক হিসাবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বড় করতে এই চেষ্টা। কোনটা ভাল এবং কোনটা খারাপ সেই নৈতিক বোধ যেন ছাত্রছাত্রীদের তৈরি হয়। পথ নিরাপত্তা, বিপর্যয় মোকাবিলা, সুখাদ্য এবং অখাদ্য চিহ্নিতকরণ, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, দূষণ কমানো, উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা, কন্যাশ্রী, প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে এমন বর্জ্য, ভূমিকম্প বা ঝড় এলে কী করণীয় এসব স্কুল পাঠ্যে রাখা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.