বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: কথায় আছে, যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। অবশ্য একথা তো শুধুমাত্র বাড়ির গৃহিণীদের জন্যই এতকাল ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু একদল পুরুষ বলছেন প্রাচীন ভাবনা ভোলার সময় এসেছে। কারণ, তাঁদেরও রয়েছে হাজার গুণ। তবে শুধু বলছেন না তাঁরা কার্যত হাতেকলমে তা প্রমাণ করে দিলেন। রাঁধুনির অনুপস্থিতিতে রীতিমতো রেঁধে বেড়ে স্কুলপড়ুয়াদের মিড-ডে মিল খাওয়ালেন শিক্ষকরা। নাকাশিপাড়া থানার ভাঙামাঠ কলোনির জিএসএফ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই ঘটনায় তাজ্জব প্রায় সকলেই।
মিড-ডে মিলের রাঁধুনিরা তাঁদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতায় স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়েছিলেন। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী একদিনও বন্ধ রাখা যাবে না মিড-ডে মিল। কিন্তু রাঁধুনিরা স্কুলে না থাকলে, কে রান্না করবেন? এই চিন্তায় প্রায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে শিক্ষকদের। তাই উপায় তো একটা বের করতেই হবে। প্রথমে ভাবেন বাইরে থেকে কোনও রাঁধুনি নিয়ে এসে রান্না করাবেন। কিন্তু ওই পরিকল্পনা সকলে সায় দেননি। তাই অন্য উপায় খুঁজে বের করেন নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার ভাঙামাঠ কলোনির জিএসএফ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
কাগজ-কলম দূরে সরিয়ে রেখে হাতা, খুন্তি হাতে তুলে নিলেন শিক্ষকেরা। তাদের কোনও শিক্ষক কেটেছেন আলু। আবার কেউ ছাড়িয়েছেন পিঁয়াজ কিংবা অন্য সবজি। আবার কেউ নেড়েছেন খুন্তি। এতদিন রাঁধুনির হাতে খাবার খেয়ে অভ্যস্ত খুদেরা। তার পরিবর্তে শিক্ষকদের অন্যরকম ভূমিকায় দেখে ছাত্রছাত্রীরা বেশ অবাক। অবশ্য অবাক তো হওয়ারই কথা। যে হাত দিনভর চক, ডাস্টার, কাগজ, কলম, পরীক্ষার খাতা কিংবা বই নিয়ে ব্যস্ত থাকে সেই হাতে হাতা-খুন্তি দেখে তাজ্জব তারা। তাই তো কচিকাঁচারা ক্লাসের ফাঁকে উঁকি দিয়ে দেখেছে রান্নাবান্না।
সোহানা ইয়াসমিন নামে এক ছাত্রী বলে, “রান্নার দিদিমণিরা কলকাতায় গিয়েছেন। তবে ওরা না আসলেও স্যাররাই আমাদের জন্য মিড-ডে মিল রান্না করেছেন। ক্লাসে এসে পড়াও দেখিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। আমাদের মিড-ডে মিল বন্ধ হয়নি।” শিক্ষকদের রাঁধা খাবার খেয়ে বেজায় খুশি পড়ুয়ারা। স্কুলে যেন এক্কেবারে পিকনিকের মেজাজ। অনেকেই বলছেন এভাবেই নাকি শিক্ষকেরা প্রমাণ করে দিলেন ইচ্ছাশক্তির কাছে যেকোনও বাধাই তুচ্ছ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.