রাজা দাস, বালুরঘাট: স্কুলের স্টাফ রুমে ঢুকে শিক্ষিকাকে প্রায় নগ্ন করে শ্লীলতাহানি, মারধরের ঘটনার পর ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও অধরা দুষ্কৃতীরা। শনিবার বালুরঘাট থেকে হিলি – গোটা দক্ষিণ দিনাজপুর (South Dinajpur) জেলা জুড়ে উঠল তীব্র প্রতিবাদের ঢেউ। দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে পথে নামলেন একধিক শিক্ষক সংগঠন, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলিও। দোষীদের বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার হিলি (Hili) ব্লকের ত্রিমোহিনী প্রতাপচন্দ্র উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করছিল নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী জার্নাতুন খাতুন। তার কান টেনে বকা দিয়ে ঘরে পাঠান বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা চৈতালী চাকী। এতেই ঘটে বিপত্তি। বিষয়টি জানার পরেই ছাত্রীর পরিবার ও প্রতিবেশীরা একসঙ্গে চড়াও হয় বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষকের ঘরের সামনে বিক্ষোভের পর স্টাফ রুমে ঢুকে পড়ে তারা। শিক্ষিকার পোশাক খুলে নেওয়ার পর শ্লীলতাহানি (Molest), মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনা ঘিরে শুক্রবার থেকেই ব্যাপক উত্তেজনা স্কুল চত্বরে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার ত্রিমোহিনীর ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ (NH) করে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। শামিল প্রাক্তন পড়ুয়া ও অভিভাবকদের একাংশ। আটকে পড়ে হিলি-কলকাতা সহ একাধিক রুটের বাস ও যান চলাচল। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভ হঠিয়ে দেয়। শিক্ষিকা নিগ্রহের ঘটনায় ইতিমধ্যেই জেলা জুড়ে শিক্ষকদের মধ্যে প্রভাব পড়েছে। এদিন বালুরঘাটে নালন্দা বিদ্যাপীঠ নামে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পথে নামেন। মুখে কালো কাপড় বেঁধে, হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বালুরঘাট শহরে মৌন মিছিল করেন তাঁরা। পাশাপাশি শিক্ষক- শিক্ষিকাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানান। এই স্কুলের শিক্ষক দীপক দাস বলেন, ”সহকর্মী হিসেবে আমরা শারীরিক হেনস্তার শিকার শিক্ষিকার পাশে আছি। বিভিন্ন সময় আমাদের অন্যায়ভাবে হেনস্থা হতে হয়। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এভাবে যখন খুশি শিক্ষকদের নিগ্রহ করা যায় না।”
নিখিলবঙ্গ শিক্ষিক সমিতির (এবিটিএ) পক্ষ থেকে বিকেলে বালুরঘাট (Balurghat) শহরে ধিক্কার মিছিল করে দোষীদের শাস্তির দাবি তোলে। পাশাপাশি নিগৃহীত শিক্ষিকার পাশে দাঁড়িয়ে বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে, বিষয়টি মিটমাট হয়ে গিয়েছে বলে শুক্রবার দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া ত্রিমোহিনী প্রতাপচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শনিবার নিজের অবস্থান বদল করেন। প্রধান শিক্ষক কমল কুমার জৈন শিক্ষিকা চৈতালী চাকীর পাশে দাঁড়িয়ে হিলি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ফিরদৌস মণ্ডল, আফ্রুজা মণ্ডল, জাকির হোসেন, মাসুদা খাতুন ও মাফুজা খাতুনের নামে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.