সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: উপকরণ বলতে খড়, বালি, আইসক্রিমের কাঠি। কখনও আবার ব্ল্যাক বোর্ডে লেখার চক, কিংবা শ্লেটে লেখার পেনসিল। এইসব দিয়েই মহিষাসুরমর্দিনী, রথ তৈরি করেছেন আগেই। এমনকী একটা আস্ত রাম মন্দিরও তৈরি করে ফেলেছিলেন। চক–পেনসিল দিয়ে তৈরি ওই রাম মন্দির চোখ টানছিল। কিন্তু অযোধ্যায় জমি বিতর্কের জন্য তা সামনে আনতে পারেননি। আজ প্রায় কুড়ি বছর পর নিজের হাতে তৈরি সেই শিল্পকর্ম সামনে আনলেন হস্তশিল্পী তথা পুরুলিয়ার সৈনিক
স্কুলের অঙ্কন বিভাগের শিক্ষক সুরজ কেশরী। ১২ ইঞ্চি উচ্চতা, ১৪ ইঞ্চি লম্বা ও ৭ ইঞ্চি চওড়া তিনটি স্তম্ভ দিয়ে শ্বেতশুভ্র ওই রাম মন্দিরের ছবি সোশাল সাইটে পোস্ট করতেই
এখন তা ভাইরাল।
সময়টা ১৯৯৯। তার সাত বছর আগেই অযোধ্যার বুকে ঘটে গিয়েছিল সেই অনভিপ্রেত ঘটনা, যা দেশের ইতিহাসে এক রক্তাক্ত, লজ্জার অধ্যায় হিসেবে লেখা হয়েছে। বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির নির্মানকে ঘিরে তখন নানান আলোচনা। সেইসময়ই এই খুদে শিল্পী তাঁর নিপুণ হাতে রাম মন্দির তৈরি করেছিলেন ব্ল্যাক বোর্ডে লেখার চক–পেনসিল দিয়ে। কিন্তু বিতর্কের জেরে তিনি তাঁর শিল্পকর্মকে আড়ালই করে
রাখেন।
শনিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অযোধ্যায় জমি বিতর্কের অবসান হওয়ায় এখন ওই শিল্পকর্মকে সকলের সামনে তুলে ধরতে পেরে যেন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে ভাসছেন ওই
শিল্পী। তাঁর কথায়, “একজন শিল্পীর তখনই সবচেয়ে বেশি আনন্দ হয়, যখন তার শিল্পকলাকে সকলের সামনে তুলে ধরা যায়। দেরিতে হলেও চক–পেনসিল দিয়ে তৈরি ওই রাম মন্দির সামনে আনতে পারলাম। সকলেই আমার হস্তশিল্পকলার প্রশংসা করছেন।”
প্রশংসা সঙ্গী করেই স্মৃতিতে ডুবে যান শিল্পী। জানান, ছেলেবেলা থেকেই নানা হস্তশিল্পকলায় ঝোঁক ছিল তাঁর। তাই ষোল বছর বয়সেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েই ওই রাম মন্দির তৈরি করেন। কিন্তু হঠাৎ করে রাম মন্দিরের ভাবনা এল কি করে? শিল্পীর কথায়, “কাজের সূত্র ধরেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক কর্মকর্তার সঙ্গে আমার আলাপ হয়। তিনি আমাকে একটি ছবি দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি তো অনেক হাতের কাজ করো। এই রাম মন্দির নির্মান করতে পারবে?’ হাতের কাজে সেই ডিজাইনই হুবহু তুলে
ধরি। কিন্তু তাঁকে আর দেখানোর সুযোগ হয়নি।” তাই খানিকটা আক্ষেপ আছে শিল্পীর। কিন্তু তাঁর এই শিল্পকর্ম ফেসবুকে আপলোড করার পরে যে লাইক পড়ছে তাতে তিনি
অভিভূত। বলছেন, “নাউ আই অ্যাম হ্যাপি, মাই ওয়ার্ক রাম মন্দির বাই চক–পেনসিল, ইয়ার ১৯৯৯।”
ছবি: সুনীতা সিং।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.