সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনকে টার্গেট করে এখন থেকেই রাজ্যে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। তাদের গা থেকে সাম্প্রদায়িক তকমা ঝেড়ে ফেলতে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক সংখ্যালঘুকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে যা হতে পারে পদ্মশিবিরের মাস্টার স্ট্রোক।
ত্রিপুরা জয়ের পরেই পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, কর্নাটক ও ওড়িশাকে তাদের পরবর্তী লক্ষ্য বলে ঘোষণা করেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। দেশের ২০টি রাজ্যে একক ভাবে বা জোট করে সরকার চালাচ্ছে গেরুয়া ব্রিগেড। ২০১৯-এ লোকসভায় দলের সংসদের সংখ্যা বাড়াতে তাই পশ্চিমবঙ্গ থেকে যত বেশি সংখ্যক সংসদ তুলে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে মোদি-শাহরা। সে লক্ষ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সেমিফাইনাল ধরে নিয়ে এগোতে শুরু এরাজ্যে করেছে বিজেপি। বিরোধীরা সবচেয়ে বেশি যে বিষয়কে ইস্যু করে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানায়, সেই সাম্প্রদায়িক তকমা কাটাতে মড়িয়া পদ্ম শিবির। আর সেজন্যই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে রেকর্ড সংখ্যক আসনে, প্রায় ৮৫০টিতে সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। অতীতের পঞ্চায়েত নির্বাচন গুলির নিরিখে যা সর্বাধিক। হিসাব বলছে, ২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে একশোর কম সংখ্যালঘুকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। এবার সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়েছে অকল্পনীয়ভাবে। বিজেপির পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু প্রার্থী দেওয়া হয়েছে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দুই দিনাজপুর, বীরভূম ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়।
রাজ্য বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি আলি হোসেন জানিয়েছেন যে, রাজ্যের ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু মানুষ বুঝতে শুরু করেছেন যে বিজেপি তাদের শত্রু নয়। এতদিন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস তাদের যে ভুল বুঝিয়ে আসছিল তা বুঝতে পেরে সংখ্যালঘুরা বিজেপির দিকে ঝুঁকছে বলে জানিয়েছেন আলি হোসেন। রাজ্য বিজের এক নেতা জানিয়েছেন, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪টি আসনের মধ্যে মাত্র ৬টি আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছিলেন তারা। পঞ্চায়েতে সংখ্যা যে হারে বেড়েছে তাতেই বিজেপির প্রতি সংখ্যালঘুদের ভরসা বেড়েছে বলেই জানিয়েছেন তিনি। একই মত দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এরাজ্যে বিজেপির দ্রুত বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, দেশের ২০টি রাজ্যে বিজেপি সরকার রয়েছে সেখানে সংখ্যালঘুরা শান্তিতে বসবাস করছে। পঞ্চায়েতে তারা রেকর্ড সংখ্যক সংখ্যালঘুকে প্রার্থী করেছেন, জয়ের সম্ভবনার কথা মাথায় রেখেই। ২০১৯-র লোকসভা ভোটের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই একই স্ট্র্যাটেজি নেওয়া। এমনই জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। তবে বিজেপির এই সংখ্যালঘু প্রেমকে খুব একটা আমল দিতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর পাল্টা দাবি, এখনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই ভরশা রেথেছে সংখ্যালঘুরা। তৃণমূল মহাসচিবের অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের প্রার্থীও করছে বিজেপি পাশাপাশি, রাজ্যে সংঘর্ষের পরিস্থিতিও তৈরি করছে।
রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, তৃণমূল ছেড়ে মুকুল রায় গেরুয়া বসন পড়ার পরেই লক্ষ্যনীয় ভাবে বেড়েছে বিজেপি শিবিরে সংখ্যালঘুদের আগমনের সংখ্যা। বিরোধী বাম-কংগ্রেস তো রয়েছেই, শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়েও জেলায় জেলায় মানুয যোগদান করেছে বিজেপিতে। তৃণমূল কংগ্রেসে থাকাকালীনই সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংক সামলানোর দায়িত্ব ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎকালীন একনম্বর সেনাপতির উপরে। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য রাজ্য বিজেপির গঠন করা কমিটিরও প্রধান মুকুল রায়ই। সেজন্য এবার আরও বেড়েছে সংখ্যালঘু প্রার্থীর সংখ্যা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.