নন্দন দত্ত, সিউড়ি: ভুয়ো পালাদার রুখতে এবার উদ্যোগ নিল তারাপীঠ মন্দির কমিটি। প্রবীণ সেবাইতদের সরাসরি রক্তের সম্পর্ক থাকলে তবেই মন্দিরে পুজো করা যাবে। দেড় যুগ পর এমন কঠোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চলেছে তারাপীঠ মন্দির কমিটি। সেই মর্মে শনিবার নোটিস জারি করে পালা কেনার দলিল পনেরো দিনের মধ্যে মন্দির কমিটির কাছে জমা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
জয়দত্ত সওদাগর বাণিজ্যে বেরিয়ে চণ্ডীপুরে নৌকা বেঁধেছিলেন। যা আজকের তারাপীঠ মহাশ্মশান। তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়ে শ্মশানের শ্বেত শিমূলতলার নিচে মাটি খুঁড়ে মা তারার শিলামূর্তি উদ্ধার করেছিলেন। কলিযুগে জয়দত্তের নির্মিত মন্দিরের ভগ্নপ্রায় দশা দেখে এগিয়ে আসেন মুর্শিদাবাদের এড়োলের জমিদার রামজীবন চৌধুরি। ১১৫০ সালে তিনিই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে নাটোরের রাজা রামকৃষ্ণ রায় তারাপীঠের মূল মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরের সংস্কার করেন মল্লারপুরের জমিদার জগন্নাথ রায়। বাংলা ১৩৭৪ সালের ১ বৈশাখ মা তারার পুজোর জন্য ১৭ জন পাণ্ডা বা সেবাইতকে নিয়োগ করা হয়। তাঁরা শ্যামাপদ পাণ্ডা, আশুতোষ পাণ্ডা, নবীন চন্দ্র পাণ্ডা, দ্বিজপদ পাণ্ডা, যোগেশ চন্দ্র পাণ্ডা, নিত্যগোপাল পাণ্ডা, তারাপদ পাণ্ডা, নবীন চন্দ্র পাণ্ডা, কাশীনাথ পাণ্ডা, নগেন্দ্রনাথ পাণ্ডা, বিপিন বিহারী পাণ্ডা, শিশির কুমার পাণ্ডা, অনাথবন্ধু পাণ্ডা, মৃত্যুঞ্জয় পাণ্ডা, তারাপদ পাণ্ডা, হরিপ্রসাদ পাণ্ডা ও গোপালচন্দ্র পাণ্ডা। আজ আর তাঁদের কেউ জীবিত নেই। ফলে তাদের বংশধর এবং বহিরাগত মিলে সেবাইতের সংখ্যা পাঁচশো। এই বহিরাগত পাণ্ডাদের অত্যাচারে অতিষ্ট মন্দিরের মূল সেবাইতরা। নিয়মিত অশান্তিতে মন্দিরের সুনাম নষ্ট হতে বসেছে বলে অভিযোগ।
[বাংলায় কেন উৎসব হবে না? চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে বিরোধীদের খোঁচা মুখ্যমন্ত্রীর]
মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, “মন্দিরের বেশ কিছু বৈধ সেবাইত অর্থের বিনিময়ে তাঁদের পালা বিক্রি করেছেন বহিরাগতদের। যা আইনত অবৈধ। রক্তের সম্পর্ক ছাড়া পালা দেওয়া নেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। এনিয়ে মন্দির কমিটি বেশ কয়েকবার বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যারা মূল সেবাইতদের কাছ থেকে পালা কিনে নিয়ে পুজোর কাজ করছেন তাদের আর রাখা যাবে না। তাই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে ২০০০ সাল থেকে যাঁরা পালা কিনে পুজো করছেন তাঁরা ১৫ দিনের মধ্যে তাদের কাছে যে সমস্ত কাগজপত্র আছে তা মন্দির কমিটির কাছে জমা দিতে হবে। তা না হলে মন্দির কমিটি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে”। মন্দির কমিটির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পুণ্যার্থীরা। কারণ, রক্তের সম্পর্ক না থাকায় সেবাইতদের হাতেই নানাভাবে হেনস্তা হতে হচ্ছে ভক্তদের। এমনকি মন্দির চত্বরে অনেক সেবাইতের আচরন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.