নন্দন দত্ত, বীরভূম: তারাপীঠ মহাশ্মশানের পবিত্রতা নষ্টের অভিযোগ তুললেন এবার শ্মশানবাসী তান্ত্রিকরা। তাদের অভিযোগ, উন্নয়নের নামে শ্মশানের পবিত্রতা নষ্ট করছে বিভিন্ন সংস্থা।এই নিয়ে তারা তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের দ্বারস্থ হয়েছেন।
[একই মন্দিরে জোড়া কালীর আরাধনা, কারণটা অদ্ভুত]
বেমালুম পালটে গিয়েছে তারাপীঠ মহাশ্মশানের চরিত্র। ঝুপড়িবাসী সাধুদের জন্য শ্মশানের এক প্রান্তে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ৫৭টি পাকা ঘর। কিন্তু গত দু’বছর সাধুদের জন্য সে ঘরে থাকার ব্যবস্থা হলেও সেখানে না আছে আলো, না বিদ্যুতের ব্যবস্থা। ফলে পাকা ঘরে থাকলেও তাদের জীবন অতিষ্ট হচ্ছে বলে সাধুদের অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, নির্মল বীরভূম গড়ার সংকল্প হলেও শ্মশানবাসীদের জন্য বা শ্মশানযাত্রীদের জন্য কোনও শৌচাগার নেই। এমনকী শ্মশানে এলে বিশুদ্ধ পানীয় জল পায় না কেউ। তারাপীঠ মহাশ্মশানের উন্নয়নের সময় বহু প্রাচীন সমাধির পাশাপাশি বহু সাধনাক্ষেত্র নষ্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগে দুটি জনস্বার্থে মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্টে। এরইমাঝে শ্মশানবাসী সাধুদের এই মনোভাবে প্রশাসনের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে। গত ২৫ বছর ধরে শ্মশানে সাধনা করছেন ধীরেন্দ্রনাথ গিরি। তাঁর কথায়, “আগে আমরা গাছতলায় থাকতাম।সেখানে ঝুপড়ি ছিল। গরমে এত কষ্ট হত না। তাছাড়া কুঠিতে থেকে শ্মশানের যে সাধনা হত পাকা ঘরে তা হয় না। এখন শ্মশানের ভিতর দশচাকা লরি থেকে ট্রাক্টর সব ঢুকছে। এতে মাটির তলায় থাকা সমাধি আত্মার চরম ক্ষতি হচ্ছে।” একই অভিযোগ দীর্ঘদিন শ্মশানবাসী লাল বাবা, মহাদেব বাবা, বিধান বাবাদের।আলোহীন শ্মশানবাসীদের পাকা ঘরে থেকে কেন তারা এত দিনে বিদ্যুতের দাবি করছে।এই প্রশ্নে তাদের উত্তর, “আমরা প্রকৃতির কোলে থাকতাম। সেখানে ঠান্ডা-গরম সবই ছিল গাছতলায়। এখন শ্মশানে দিনে মাছি আর রাতে মশার জ্বলায় টেকা যায় না।” তবে শ্মশানে বিদ্যুতের আলো নিয়ে নানা মত সাধু থেকে শাসকদের। সাধুদের মতে শ্মশান আলোকিত হলে রাতে যে আত্মা-পরমাত্মারা শ্মশানে যাতায়াত করে তা ব্যাহত হবে। একইসঙ্গে শ্মশানের যে আভিজাত্য নষ্ট হবে।
[এককালের ত্রাস, এখনও ভক্তিভরে মা কালীর পুজো করেন এই প্রাক্তন ডাকাত সর্দার]
সাধুদের এই বক্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে প্রশাসন। বিষয়টি বিবেচনা করতে তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ বৈঠক ডেকেছে। এ প্রসঙ্গে পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা কৃষিমন্ত্রীআশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগামী ১৬ অক্টোবর শ্মশান নিয়ে আলোচনা হবে। নদীর ধারে শৌচাগার নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে। সাধুদের কুটিরে বিদ্যুতের আলো দরকার কিনা সে ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা বলেই নেওয়া হবে সিদ্ধান্ত। শ্মশানের গাম্ভীর্য বজায় রাখতে প্রয়োজনে শ্মশানবাসী সাধুদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
ছবি: সুশান্ত পাল
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.