টিটুন মল্লিক: রাবণ বধের পর রামচন্দ্রের অযোধ্যা ফেরাকে প্রতীকী করে অকাল রথযাত্রা উৎসবে মাতল বাঁকুড়ার ওন্দার তপোবন৷ শুরু হল আটদিনব্যাপী রথযাত্রা উৎসব৷ বৃহস্পতিবার উৎসবের প্রথমদিন শামিল হলেন বাঁকুড়ার জেলার বাসিন্দারা৷ পংক্তিতে বসে পাত পেড়ে খেলেন খিচুড়ি ভোগ৷ যদিও এককালের পিতলের তৈরি রথ আজ আর নেই৷ নেই সোনায় গড়া রাম, লক্ষ্মণ, সীতার মূর্তি৷ এখন অষ্টধাতুর গড়া তিন মূর্তি রথের সিংহাসনে বসিয়ে রথযাত্রা হয়৷
অন্যদিকে মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুরে রাবণ নিধন করে রামের যুদ্ধ জয়ের উল্লাসে দশমীর দিন থেকে দ্বাদশী পর্যন্ত শহরের অলিগলিতে চলছে ‘রাবণকাটা’ উৎসব৷ এই উৎসবে হাজারও রঙবাহারি পোশাক আর ঝাঁজ, কাঁসি, টিকারার করতানে মজে আছে শহর৷ বিষ্ণুপুরের ইতিহাসবিদ চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত জানান, প্রায় তিনশো বছরের পুরনো রীতি ‘রাবণ কাটা’ নাচের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মল্লরাজাদের স্মৃতি৷ সপ্তদশ শতকে মল্লরাজাদের তৈরি রঘুনাথজিউ মন্দিরে এই নাচ হত৷
সেই তুলনায় তপোবনের রামচন্দ্রের রথযাত্রা নবীন৷ সে কথা স্বীকার করলেও পুরোহিত বিপদতারণ চক্রবর্তী জানান, মল্লরাজাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে গিয়েছে তপোবনের এই রামচন্দ্রের রথযাত্রা৷ প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ রামচন্দ্রের রথযাত্রা দেখতে আসেন৷ দুর্গাপুজো উপলক্ষে ছুটির মরসুমে ছোটনাগপুর মালভূমিতে রামচন্দ্রের বিজয়রথ আর রাবণকাটার মতো মল্লবংশের প্রাচীন ঐতিহ্যগুলিকে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরলে আকর্ষণ বাড়বে বলে মনে করছেন এই এলাকার বাসিন্দারা৷ তপোবনের রথযাত্রা উদ্যোক্তা কমিটির সম্পাদক নিরঞ্জন পাত্র বলেন, “মল্লরাজাদের বহু অজানা ইতিহাসের প্রতি মানুষের মধ্যে কৌতূহল আজও সমানভাবে বজায় রয়েছে৷ এই টুকরো টুকরো স্মৃতিকে কোলাজ করে পর্যটন শিল্পে কাজে লাগালে পর্যটকদের আগ্রহ বাড়বে বলে মনে হয় আমাদের৷”
তপোবনের এই রথযাত্রা ঘিরে আটদিন ধরে রথযাত্রার সময় সন্ধে সাড়ে সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত আশপাশের গ্রামগঞ্জ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় হাজার বিশেক মানুষের জমায়েত হয়৷ প্রতিদিন সন্ধ্যায় হয় আরতি৷ গ্রামবাসীরা জানালেন, সংস্কার, বিশ্বাস যাই হোক না কেন- রামচন্দ্রের বিজয়রথ এখন তপোবনের ঐতিহ্য৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.