রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ভোট মিটে গেলেও শান্তি নেই ভাটপাড়ায়৷ টানা প্রায় ৩৫ দিন ধরে লেগেই রয়েছে গন্ডগোল৷ কখনও তৃণমূল এবং বিজেপি সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা৷ তো কখনও চলছে গুলি৷ বোমাবাজির ঘটনাও নতুন নয়৷ তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভাটপাড়ার অশান্তিতে ঝরল রক্ত৷ গুলি-বোমায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২ জন৷ এই ঘটনাটি এখন চিন্তা বাড়াচ্ছে ঘাসফুল শিবিরের৷ এদিকে, আবার তারই মাঝে বদল করা হল বারাকপুর কমিশনারেটের কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরিকে৷ বর্তমানে আইজি শিলিগুড়ি মনোজ ভার্মাকে এই পদে নিয়োগ করা হয়েছে৷ শুক্রবার দায়িত্ব নেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর৷
বৃহস্পতিবার ভাটপাড়ায় একটি থানা উদ্বোধনের কথা ছিল৷ কিন্তু তার আগে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ভাটপাড়া মোড়ে শ্রমিকদের বসতিতে আচমকাই বোমাবাজি শুরু হয়। এরপর বেলা যত গড়িয়েছে, বোমাবাজিও ততই বেড়েছে। সকালে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়েছে। সঙ্গে চলেছে গুলিও। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, শূন্যে প্রায় ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি চালায় পুলিশ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেলও। এলাকায় নামানো হয় ব়্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স। ভাটপাড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। আহত কমপক্ষে পাঁচজন।
ভাটপাড়ার পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও ডিজি-সহ পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,‘‘ভাটপাড়ায় অশান্তির নেপথ্যে রয়েছে বহিরাগতরা। সক্রিয় হয়ে উঠেছে স্থানীয় সমাজ বিরোধীরা। কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে সরকার। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ এদিন বিকালে ভাটপাড়ায় যান ডিজি৷ সেখানে গিয়ে অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি৷ তারপর বারাকপুর কমিশনারেটের কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরিকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ শুক্রবারই হয়তো তাঁর থেকে সমস্ত দায়িত্ব বুঝে নেবেন মনোজ ভার্মা৷
এদিকে, ভাটপাড়া নিয়ে অশান্তির দায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘাড়েই চাপাল বিজেপি। বিজেপির অভিযোগ, পুলিশের গুলিতেই সেখানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ কেন ও কার নির্দেশে গুলি চালাল তা নিয়ে বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত দাবি করেছে রাজ্য বিজেপি। শুক্রবার ভাটপাড়া যেতে পারে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। ভাটপাড়া নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “নির্বাচনের সময় থেকেই ভাটপাড়ায় গন্ডগোল চলছে। রাজনৈতিক স্বার্থে, জায়গা দখল করতে পুলিশকে দিয়ে গুলি চালানো হচ্ছে। হার কে মেনে নিতে পারছে না তৃণমূল। প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে। যা হচ্ছে এসব ভাল হচ্ছে না।” বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেছেন পুরোও ঘটনার দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে। নিরপেক্ষ তদন্তেরও দাবি করেছেন তিনি। মুকুল বলেছেন, “ভাটপাড়ার মানুষের জনাদেশ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী। তাই বার বার পুলিশকে সেখানে ব্যবহার করছেন। পুলিশ গুলি চালিয়েছে। গুলিতে নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষের মৃত্যু হয়েছে। একজন ফুচকাওয়ালা মারা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ এখন ট্রিগার হ্যাপি। নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। কেন পুলিশ গুলি চালাল তার নিরপেক্ষ তদন্ত করা দরকার। ভাটপাড়ায় কেন এই পরিস্থিতি কায়েম হচ্ছে তার দায় দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.