Advertisement
Advertisement
Tamluk

বাবা-মায়ের মৃত্যুশোক ভুলতে না পেরে চরম সিদ্ধান্ত, ‘আত্মঘাতী’ তমলুকের স্কুলছাত্রী

গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী নাবালিকা।

Tamluk school girl found dead in her house

ছবি: প্রতীকী

Published by: Sayani Sen
  • Posted:March 26, 2025 7:54 pm
  • Updated:March 26, 2025 7:54 pm  

সৈকত মাইতি, তমলুক: বিগত চার বছরে একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যু শোক। বছর দেড়েকের মধ্যেই বাবা-মায়ের মৃত্যু। তার ফলে মানসিক অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পারছিল না তমলুকের নাবালিকা। বাবা-মায়ের মৃত্যুশোক ভুলতে না পেরে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী স্কুলছাত্রী। মঙ্গলবার রাতে তমলুকের হরিদাসপুর এলাকার এই ঘটনায় নেমেছে শোকের ছায়া।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দেবশ্রী রানা। বাবা দুলাল রানা পেশায় ছিলেন একজন ইলেকট্রিশিয়ান। তমলুকের হরশংকর এলাকার বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রেই তিনি দীর্ঘদিন দুর্গাপুর টাউনশিপে ফ্ল্যাট কিনে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেছিলেন। আর সেখানেই বাবা-মায়ের সঙ্গে সপরিবারে বসবাস করছিল দেবশ্রী ও তার ছোট ভাই। এমন অবস্থায় বছর দেড়ের আগে আচমকা মা জ্যোৎস্না দেবীর ব্রেনস্ট্রোকে মৃত্যু অনেকটাই নাড়িয়ে দিয়েছিল ছোট্ট নাবালক-নাবালিকাকে। আর এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মাসছয়েকের ব্যবধানেই কিডনিতে জটিল সমস্যার জেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাবা দুলালবাবুও।

Advertisement

ফলে অগত্যা তাই দুর্গাপুরের সমস্ত পাঠ চুকিয়ে পাশেই হরিরাজপুরে পিসির বাড়িতে পিসেমশাইয়ের কাছেই থাকতে শুরু করেছিল ছোট্ট দুই ভাইবোন। কিন্তু কোনভাবেই যেন বাবা-মায়ের মৃত্যু শোক ভুলতে পারছিল না দেবশ্রী। এমন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৭ টা নাগাদ ওই পিসি বাড়িতেই শোওয়ার ঘরে সিলিং ফ্যানে গলায় ওড়নার ফাঁস নিয়ে আত্মঘাতী হন ওই স্কুলছাত্রী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকে উদ্ধার করে তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে জানান। আর এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাজুড়ে নেমেছে শোকের ছায়া। দেহ বুধবার বিকেলে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিশ।

তাম্রলিপ্ত মেডিক্য়াল কলেজের মর্গে দেহ নিতে এসে পিসতুতো দাদা দেবায়ন সামন্ত বলেন, “আচমকা ওদের বাবা-ময়ের মৃত্যুর পর ছোট্ট দুই ভাইবোন আমাদের বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছিল। আমার মা বছর ১৫ আগে মারা গিয়েছেন। আমরাও বেশিরভাগ সময় কর্মসূত্রে বাড়ির বাইরে থাকি। তাই আমার বাবার একমাত্র সাহারা হয়ে উঠেছিল ছোট্ট দুই ভাইবোন। কিন্তু বোন যে বাবা-মায়ের মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে না পেরে এভাবে একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে তা আমরা কখনো কল্পনা করতে পারিনি।” দাদা বৌদির পাশাপাশি ভাইঝির আচমকা মৃত্যুতে চোখের জল বাঁধ মানছে না কাকা গোপাল রানার। তিনি বলেন, “আমাদের পরিবারে কী যে ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছি না। প্রায় চার বছর ধরে আমার বাবা-সহ পরিবারের ৭ জনের একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে। দিন ১৫ আগেও হরিয়ানাতে আমার ১৭ বছরের বড় মেয়ে প্রতিমাও একইভাবে গলায় দড়ি নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। বাবা নিমাই রানার মৃত্যুর পর আমার আর এক ভাই সেনা জওয়ান নন্দ রানাও লাদাকে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। তাই এখন যা অবস্থা বাড়িতে একের পর এক পুরুষের মৃত্যুতে গোটা পরিবারেই শোকের ছায়া।” তমলুক থানার আইসি সুভাষচন্দ্র ঘোষ জানিয়েছেন, এক স্কুলছাত্রীর গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুমামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত চলছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement