সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মামলার চাপ, আদালত কক্ষ, সওয়াল-জবাবই একদা ছিল তাঁর নিত্যদিনের রুটিন। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর রায় দিয়েছিলেন। তার জেরে রাতারাতি চাকরিপ্রার্থীদের ‘মসিহা’ হয়ে ওঠেন। আচমকাই পালা বদল। সকলকে অবাক করে এক রবিবাসরীয় দুপুরে ঘোষণা করেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা। বিচারপতির আগে যুক্ত হয় ‘প্রাক্তন’ তকমা। চেনা বৃত্ত ছেড়ে সম্পূর্ণ অন্য পথে পা বাড়ান। যোগ দেন বিজেপিতে। রাজনীতিতে একেবারেই নব্য সেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপরেই আস্থা রেখেছিল গেরুয়া শিবির। তমলুকের সবুজ মাটিতে পদ্ম ফোটানোর ভার তুলে দেন প্রাক্তন বিচারপতির কাঁধেই। প্রথমবার ভোট ময়দানে পা রেখেই বাজিমাত। তৃণমূলের কাছ থেকে তমলুক ছিনিয়ে সেখানে পদ্ম ফোটালেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
ভোটের দিন সকাল থেকে ছুটে বেড়িয়েছেন। যেখানেই সামান্য অভিযোগ পেয়েছেন, সেখানেই দৌড়ে গিয়েছেন। শুনতে হয়েছে ‘চোর’ স্লোগান। মেজাজও হারিয়েছেন। তবে জয়ের বিষয়ে প্রথম থেকে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন অভিজিৎ। মঙ্গলবার, চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) ভোটগণনা শুরুর পর থেকেই ভোটবাক্সে দেখা মিলল সেই আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। সকাল থেকেই তৃণমূলের (TMC) দেবাংশু ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়কে পিছনে ফেলে এগোতে থাকেন অভিজিৎ। পোস্টাল ব্যালটে প্রায় ৬৭ হাজার ভোটে এগিয়ে যান প্রাক্তন বিচারপতি। মাঝে অবশ্য খানিকটা সময় প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে দেবাংশু টেক্কা দেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Abhijit Ganguly)। যদিও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। শেষমেশ জয়ের হাসি হাসলেন প্রাক্তন বিচারপতিই। দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূলের দেবাংশু।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই অধিকারী পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে তৃণমূলের। শুভেন্দু অধিকারী বারবারই দাবি করেন, অধিকারী পরিবারের সাহায্য ছাড়া তমলুক কিংবা কাঁথিতে তৃণমূল সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট দুর্বল। তাই তমলুকে চব্বিশের নির্বাচন ছিল তৃণমূলের প্রেস্টিজ ফাইট। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে হারানোর শপথ নিয়েছিল তৃণমূল। তাঁর বিরুদ্ধে দলের তরুণ তুর্কি দেবাংশু ভট্টাচার্যকে (Debangshu Bhattacharya) টিকিট দিয়েছিল শাসক শিবির। বাংলা জুড়ে সবুজঝড়ের মাঝেও তমলুকে শেষ হাসি হাসতে পারল না তৃণমূল। বরং তমলুকের সবুজ মাটিতে পদ্ম ফোটালেন অভিজিৎ।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, জয়ের নেপথ্যে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা অবশ্যই ফ্যাক্টর। আবার শুভেন্দুর গড় হিসাবে পরিচিত তমলুকে (Tamluk) পদ্ম ফোটার নেপথ্যে বিরোধী দলনেতার ক্যারিশ্মা নেহাত কম কিছু নয়। অবশ্য গোটা বাংলার নিরিখে বিজেপির ফল মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। এই ভরাডুবির মাঝে অভিজিতের জয় যে গেরুয়া শিবিরের কাছে খানিক অক্সিজেনের মতো, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.