ছবিতে নতুন জামা পেয়ে খুশিতে আত্মহারা পথশিশুরা, ছবি: রঞ্জন মাইতি।
সৈকত মাইতি, তমলুক: পুজোয় হইহই করে পাঁচটি দিন কাটানোর পরিকল্পনা সম্পূর্ণ হয়েছে। ষষ্ঠীতে কুর্তি তো সপ্তমীতে সালোয়ার, অষ্টমীতে শাড়ি তো নবমীতে ওয়েস্টার্ন। দশমীতে একটা ঝাক্কাস লুক চাই। কিন্তু যাদের মাথার ছাদটুকু নেই, তাদের কী পুজো আসে না? সেই সহায় সম্বলহীন ছোট ছোট মুখে খুশির ছোঁয়া দেখতে এগিয়ে এলেন তমলুকের যুবকরা। নিজেদের সামান্য উপার্জন থেকে হাতখরচ বাঁচিয়ে পথশিশুদের হাতে তুলে দিলেন নতুন জামা।
হ্যাঁ পুজোর জামা। বাজারের বড়বড় দোকানে পুজোর বিজ্ঞাপন। লাইন দিয়ে পোশাক কেনার ধুম। পথশিশুদের চোখ এড়ায় না, যখন বাবা-মায়ের হাত ধরে শপিং ব্যাগ নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি করে তাদেরই বয়সের কোনও খুদে। গায়ে দামী জ্যাকেট পায়ে চোখ ধাঁধানো জুতো। কী নেই তাদের কাছে। ফুটপাথে দাড়িয়ে পথচারীদের থেকে এক দুটাকা সাহায্য নিতে গিয়ে এই দৃশ্য তাদেরও চোখেও শূন্যাতর জন্ম দেয়। এবার সেই শূন্যতা ভরাটে এগিয়ে এলেন তমলুকের হরিজন পল্লির জিতু ভাঙ্গারি, দিলীপ ঘড়ুই, প্রদীপ, রকি, সুর্জা, উমেশ, মিলন, রমা, সন্তুরা। নিজেরা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। নুন আনতে পান্তা ফুরোলেও বচ্ছরকার উৎসবে নতুন পোশাক জুটেই যায়। কিন্তু বাবা মা ছেড়ে যাওয়া পথশিশুদের খড়ি ওঠা গায়ে সেই কবেকার ছেঁড়া জামা। কোনও পথচারী হয়তো দয়া করে দিয়েছেন। সাবানহীন গায়ে তাই এঁটে বসে আছে। এবার পুজোয় তারাও না হয় নতুন জামা পড়ুক। সকলের সঙ্গে পুজোর আনন্দে শামিল হোক। তাতে যদি ওই যুবকদের দৈনন্দিন খরচায় সামান্য টান পড়ে তাও উশুল হয়ে যাবে। নেই রাজ্যের বাসিন্দারাও সব পেয়েছির দেশে পৌঁছে যাবে।
হরিজন পল্লিতে ওই যুবকদের উদ্যোগেই তৈরি হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মানবতার দেওয়াল। স্থানীয় দুঃস্থদের সাহায্যার্থে কখনও শীতবস্ত্র কখনও খাবার দিয়ে এসেছেন। সামনেই পুজো, তাই ঠিক করেছিলেন এবার নতুন জামা পরবে পথশিশুরা। সন্তু, উমেশদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রয়েছে খুদে সদস্য ‘ইন্ডিয়া গট ট্যালেন্ট’ খ্যাত সারিকা বিজলি। এদিন সকলের উদ্যোগে দুস্থ শিশুদের জন্যে মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। সেখানে ৫৬ জন পথশিশুর শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন জামা। নতুন জামা পেয়ে খুশিতে আত্মহারা শিশুরা। এই প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার জিতু ভাঙ্গারি বলেন, ‘নিজেদের সামান্য কিছু উপার্জন এবং পকেট খরচ বাঁচিয়ে ও অন্যান্য সহৃদয় ব্যক্তিদের সহায়তায় একটি ফান্ড গড়ে তুলেছি। সেখান থেকেই বছরের বিভিন্ন সময় অসহায়দের সাহায্যে নানান রকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একই ভাবে খেজুরির অনাথ শিশুদেরও পুজোয় নতুন পোশাক তুলে দেওয়া হয়েছে। এভাবে আমরা নিঃস্বার্থ ভাবেই সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে থাকতে চাই।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.