সৈকত মাইতি, তমলুক: পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী করতে লক্ষাধিক টাকা ‘ঘুষ’ নেওয়ার অভিযোগ উঠল বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগে সরব পাঁশকুড়ার বিজেপির পরাজিত প্রার্থী। অভিযুক্ত বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ঘনিষ্ঠ কোষাধ্যক্ষ। মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র শোরগোল শুরু হয়েছে। টাকা ফেরত চাওয়ায় প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। পাঁশকুড়া থানার পুলিশের দ্বারস্থও হয়েছেন বিজেপির ওই পরাজিত প্রার্থী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির পরাজিত প্রার্থী রাসবিহারী রানা। পাঁশকুড়া ব্লকের অন্তর্গত মাইসরা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন জগতপুর এলাকার বাসিন্দা। পার্শ্ববর্তী গোবিন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনে তাঁকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। ভোট গণনার উপর দেখা যায় প্রায় ৭ হাজার ২০০ ভোটারের মধ্যে তাঁর প্রাপ্ত ভোট প্রায় ১৪০০। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে সিপিএম। আর তৃণমূল প্রার্থী হানিফ মহম্মদের কাছে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর তীব্র হয় বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল।
বিজেপি প্রার্থী রাসবিহারী রানার অভিযোগ, প্রায় লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে তাঁকে পঞ্চায়েতর টিকিট বিক্রি করেছিলেন বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার কোষাধ্যক্ষ জগদীশ প্রামাণিক। কিন্তু পছন্দমতো আসনে তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি। উলটে নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সঙ্গে গোপন ষড়যন্ত্র করে ভোটে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুর্ব্যবহার করে কোনওরকম যোগাযোগ রাখা হয়নি। টাকা ফেরত চাইতে গেলে উলটে মারধর এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। তাই দলের জেলা কোষাধ্যক্ষর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই পাঁশকুড়া থানার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন বিজেপির ওই পরাজিত প্রার্থী। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট দেওয়ার জন্য প্রায় ৮ দফায় আমার কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা নিয়েছিলেন জেলার কোষাধ্যক্ষ জগদীশ প্রামাণিক। এমনকী, নির্বাচনের একেবারে প্রাক্কালে মাত্র ২০ হাজার টাকার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করায় বাধ্য হয়ে শেষ সম্বল গরু বাছুর বিক্রি করে সেই টাকা কোষাধ্যক্ষের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরেও আমাকে আমার নিজের বুথে প্রার্থী না করে পাশের গ্রাম পঞ্চায়েতে যেখানে বিজেপির সেভাবে কোন ভোট ব্যাংক ছিল না সেখানে কোষাধক্ষের নিজের এলাকায় প্রার্থী করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও আমার নিজের চেষ্টায় ভোটের লড়াই শুরু করলেও তৃণমূলের সঙ্গে গোপন সেটিং করে আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
কোষাধ্যক্ষ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বিজেপির তমলুক সংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভিযোগ উড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “পরিকল্পনামাফিক ষড়যন্ত্র এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এমন অভিযোগ করা হচ্ছে। এই অভিযোগের কোন সত্যতা নেই।” পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজিত রায় অবশ্য বলেন, “গোটা দলটাই এখন সারা ভারতবর্ষকে লুট করছে। তাই গরু বাছুর বিক্রির টাকায় বিজেপির টিকিট কেনাবেচা আর এমন নতুন কিছু নয়। তবে সেটা ওদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনো সম্পর্ক নেই।” সম্প্রতি এই পাঁশকুড়াতেই বিজেপির জয়ী প্রার্থীদের টাকার বিনিময়ে জোর করে তৃণমূলকে সমর্থন করানোর অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির এই অভিযুক্ত কোষাধক্ষ্য এবং জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.