সুমন করাতি, হুগলি: আজ স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি বিশিষ্ট বিপ্লবী ঋষি অরবিন্দেরও (Sri Arobindo) জন্মদিন। হুগলি জেলার কোন্নগরে তাঁর বাড়ি। সেখানকার মানুষজনের কাছে আজকের দিনটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কোন্নগরে তাঁর বাড়ি ‘অরবিন্দ ভবন’ এখন সংগ্রহশালা। অথচ এখানকার অনেকেই জানেন না যে তিনি এখানকারই ভূমিপুত্র। আর সেই তথ্য ছড়িয়ে দিতে এই আর্কাইভ এখন জনসাধারণের জন্য খোলা হয়। আজকের দিনে সেই আর্কাইভই ঘুরে দেখা।
দেশের স্বাধীনতার (Freedom fighter) জন্য লড়াই করেছেন যে বিপ্লবীরা, তাঁদের অনেকেরই জন্মভূমি হুগলি (Hooghly)। তাঁদের মধ্যে অন্যতম শ্রী অরবিন্দ। ভারতীয় দার্শনিক, যোগী, কবি ও জাতীয়তাবাদী – বহু পরিচয় তাঁর। সাংবাদিক হিসেবে তিনি ‘বন্দে মাতরম’ সংবাদপত্র সম্পাদনা করেছিলেন। হুগলির কোন্নগরে রয়েছে তাঁর পৈতৃক বাড়ি, যা বর্তমানে ‘অরবিন্দ ভবন’ নামে পরিচিত। শ্রী অরবিন্দ ভারতকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯১০ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের এক প্রভাবশালী নেতা। তারপর তিনি এক আধ্যাত্মিক সংস্কারকে পরিণত হন এবং মানব-প্রগতি ও আধ্যাত্মিক বিবর্তনের ক্ষেত্রে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির কথা প্রচার করেন।
ইংল্যান্ডের (England) কেমব্রিজে কিংস কলেজে অরবিন্দ ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস নিয়ে পড়াশোনা করেন। ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর বরোদার দেশীয় রাজ্যের মহারাজের অধীনে তিনি একাধিক অসামরিক পরিষেবা কাজে অংশগ্রহণ করেন। পরে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এবং বাংলায় অনুশীলন সমিতির ক্রমবর্ধমান বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। একটি শুনানির মামলা চলাকালীন একাধিক বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় এই সংগঠন জড়িয়ে পড়লে অরবিন্দও গ্রেপ্তার হন। এই সময় তাঁর বিরুদ্ধে আলিপুর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। বোমার মামলায় যখন অরবিন্দকে আলিপুর কারাগারে রাখা হয়, তখন সেখানেও উল্লেখ করা হয় তাঁর বাড়ির ঠিকানা হুগলির কোন্নগরে (Konnagar)। জেলে বন্দি থাকার সময় তিনি অধ্যাত্মবাদের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হন। মুক্তিলাভের পর অরবিন্দ পন্ডিচেরি চলে যান এবং রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে অধ্যাত্ম সাধনায় মনোনিবেশ করেন।
বর্তমানে অরবিন্দ ভবনে সংরক্ষিত রয়েছে অরবিন্দের আর্কাইভ (Archieve)। তাঁর হাতে লেখা নানা বই। এমনকি তাঁর মৃত্যুর পর চিতাভস্ম সংরক্ষিত করে রাখা রয়েছে এই অরবিন্দ ভবনে। প্রতি শনিবার ও রবিবার জনসাধারণের জন্য সকাল ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই অরবিন্দ ভবন। কোন্নগর শুধু নয়, গোটা দেশব্যাপী বিভিন্ন মানুষ আসেন অরবিন্দের আদর্শের চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে। আজ স্বাধীনতা দিবসের তাই কোন্নগর তথা হুগলি জেলার মানুষের কাছে এক যেন অন্য অনুভূতি এই ইতিহাস।
হুগলির আরেক স্বাধীনতা আন্দোলনে শামিল হওয়া আরেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবারের করুণ দশা হুগলিতে। মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে শামিল হওয়া, ওড়িশার বুড়িবালাম নদীর তীরে চিত্তরঞ্জন দাস, রাসবিহারী বসুর সঙ্গে সামিল হওয়া ব্যক্তি যিনি ১৯৪০ সালে ৩৫ বছর বয়সে জেলে গিয়েছিলেন। এই সাধীনতা সংগ্রামী অনাদি গোবিন্দ রায়ের তাম্রলিপি, শংসাপত্র ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী চুরি হয়ে গিয়েছে ২০১৩ সালে বৈদ্যবাটির (Baidyabati) বাড়ি থেকে। পরিবার বলতে ছোট ছেলে তপনকুমার রায় গত হওয়ার পর পুত্রবধূ দুর্গা রায় এক ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন চাপদানির ৫ নং ওয়ার্ডের ১৪৭ আর বি এস রোডে। আজকে দিনে শ্বশুরের ছবিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে দুর্গা অভিযোগ করলেন এত মূল্যবান জিনিস চুরি হয়ে গেলেও কোনও অভিযোগ নেয়নি পুলিশ। এ দুয়ার-ও দুয়ার ঘুরে কোনও সুরাহা হয়নি। যদি উদ্ধার করা যায় চুরি যাওয়া সব কিছু, তাহলে নাতি-নাতনি গর্ব করে বলতে পারবে, ”আমার দাদু স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.