দীপঙ্কর মণ্ডল: ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গের জন্মদিন। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলনের ফলেই তা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু সেই ইতিহাস রাজ্যের জনমানসে সেভাবে তুলে ধরা হয়নি। শনিবার কলকাতায় বাংলার বিদ্বজ্জনদের নিয়ে একটি সভা করে ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশন’। সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, রাজ্যজুড়ে ২০ জুন দিনটি পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে পালন করা হবে। ৬ জুলাই হুগলির জিরাটে শ্যামাপ্রসাদের পৈতৃক বাড়িতে তাঁর জন্মদিন পালিত হবে। বাংলার জাগরণে তাঁর পরিবারের অবদান সবার কাছে তুলে ধরতে চায় এই সংগঠন। এদিন সিদ্ধান্ত হয়েছে, জেলায় জেলায় সভা-সমিতি করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে শ্যামাপ্রসাদের চিন্তাধারা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ২৩ জুন শ্যামাপ্রসাদ প্রয়াত হন। এই দিনটিকে ‘আত্মবলিদান দিবস’ হিসাবে পালন করবে ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশন’।
[ সাতসকালে চায়ের দোকানে ঢুকে পড়ল বেপরোয়া বাস, মৃত ২ ]
আইসিসিআর-এ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এদিন ছিলেন, ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর অধিকর্তা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়, সংগঠনের উপদেষ্টা তথা সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, শিল্পপতি শিশির বাজোরিয়া, অধ্যাপক অভিজিৎ চক্রবর্তী, অধ্যাপক তনভির নাসরিন, লেখক মোদিত রায়, যোগেশচন্দ্র চৌধুরি কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায় প্রমুখ। গবেষক, শিক্ষক, অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবীরা উপস্থিত ছিলেন এদিনের সভায়। শ্যামাপ্রসাদের চিন্তাধারা পুস্তিকা আকারে ছাপিয়ে তা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিলি করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে এদিন। প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বাংলার বিধানসভায় (আইনসভায়) হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ গঠনের প্রস্তাব পাকা হয়। এই দিনটিকেই ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসাবে পালন করতে চান বিদ্বজ্জনেরা। অন্যদিকে ভারতের শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন শিল্প উন্নয়ন নিগম, প্রথম শিল্পনীতি প্রণয়ন, চিত্তরঞ্জন লোকমোটিভ স্থাপন, সিন্ধ্রি সার কারখানা-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। খড়গপুরে ভারতের প্রথম ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স’ স্থাপনা, কলকাতার প্রথম ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সোশাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট’ স্থাপনার ভাবনা তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। শিক্ষা এবং শিল্পে তাঁর চিন্তাগুলিকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে এদিন।
[ চলন্ত গাড়িতে খাঁচাবন্দি কুকুর, ভাগাড় কাণ্ডের আতঙ্ক ফিরল মেমারিতে]
ভারতের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সংবিধানের বিশেষ অনুচ্ছেদ ৩৭০ ধারা বিলোপ ও পারমিটরাজ বাতিলের দাবিতে শ্যামাপ্রসাদ কাশ্মীর অভিযান করেছিলেন। ১৯৫৩ সালের ১১ মে পাঞ্জাবের উধমপুরে শেষ সভা করে কাশ্মীরে প্রবেশের পথে তিনি গ্রেপ্তার বরণ করেন। বন্দি অবস্থায় শেখ আবদু্ল্লার কারাগারে শ্যামাপ্রসাদকে ১৯৫৩ সালে ২৩ জুন পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয় বলে অনেকে অভিযোগ করেন। এদিন বিদ্বজ্জনেদের কথায় উঠে আসে, শ্যামাপ্রসাদ স্বাধীন দেশে নিজেকে বলিদানের মধ্যে দিয়ে ভারতের অখণ্ডতার পক্ষে সওয়াল করে গিয়েছেন। উপস্থিত অনেকেই এদিন স্মরণ করেন, শ্যামাপ্রসাদের মরদেহ নিয়ে কলকাতার মিছিলে মানুষের ঢল নেমেছিল। তাঁর শিয়রে ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। কলকাতার সঙ্গে সারা ভারতবর্ষের মানুষ সেদিন গর্জে উঠেছিল। ধিক্কারে ফেটে পড়েছিল সারা দেশ। আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী ও শ্যামাপ্রসাদের মা যোগমায়াদেবী, মুখ্যমন্ত্রী ও চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেছিলেন। এসব কথাই ফের সবার কাছে পৌঁছে দিতে চায় এই সংগঠন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.