সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: আসন্ন পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল সুপ্রিমোর নির্দেশমতো জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে নতুন কর্মসূচি। ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচির আওতায় ‘স্বীকৃতি সম্মেলন’ করে শুরু হয়েছে দলের পুরনো কর্মীদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে ফেরানোর কাজ। কিন্তু কারা পাচ্ছেন এই স্বীকৃতি? সত্যিই ফেরানো হচ্ছে পুরনো কর্মীদের? কারা ঠিক করছে সেই তালিকা? জেলাগুলিতে কাজে নেমে এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য দলের নির্বাচনী কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের টিমকেই দায়ী করলেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামেও ‘স্বীকৃতি সম্মেলন’ আমন্ত্রিতদের তালিকা দেখে মুখ ভার অনেকের।
রবিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের ‘স্বীকৃতি সম্মেলন’-এ দেখা গেল, সংবর্ধনা পাচ্ছেন পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বা দলের অঞ্চল সভাপতির পদ সামলানো ব্যক্তিরাই। পরম সমাদরে আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার সংবর্ধনা দিলেন অজিত মণ্ডল নামে এক দলীয় কর্মীকে, যিনি বর্তমানে ভেদিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। স্বীকৃতি দেওয়া হল আউশগ্রামের রামনগর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, জিয়াউল হককে। গুসকরার একটি লজে বর্তমান দলীয় পদাধিকারীদের এহেন ‘সাজানো’ স্বীকৃতি দেওয়ার ঘটনার পর তৃণমূলের অন্দরেই নানা প্রশ্ন উঠেছে।
গুসকরা পুরসভার বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর মল্লিকা চোংদার বিধায়কের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন। বিধায়কের উদ্দেশে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “মাননীয় বিধায়ক সাহেব, দয়া করে সত্যি কথা বলবেন কার নামের তালিকা এসেছে? প্রকাশ করুন কার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হল।” মল্লিকাদেবীর আরও দাবি, গুসকরায় অনেক কর্মী রয়েছেন, যাঁরা দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে এখনও সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছেন না। তাঁরা কেন ডাক পেলেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। এনিয়ে বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডারের পালটা দাবি, “যে তালিকা দল থেকে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, সেই তালিকা ধরেই তালিকা ধরে সকলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কয়েকজন আসতে পারেননি। তাঁদের বাড়ি গিয়ে সংবর্ধনা দেব।”
পুরুলিয়ার সমস্যা আবার ভিন্ন। বান্দোয়ানে আয়োজিত ‘স্বীকৃতি সম্মেলন’-এ গরহাজির ব্লক নেতৃত্বের অধিকাংশ। সাত অঞ্চল কমিটির সভাপতি অনুপস্থিত থাকার কারণ হিসেবে নজিরবিহীনভাবে টিম পিকেকে দুষলেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি। অথচ হারানো জনসমর্থন ফিরে পেতে এধরনের কর্মসূচি দলের নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরেরই মস্তিষ্কপ্রসূত। এ নিয়ে মানবাজার দু’নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি হংসেশ্বর মাহাতো বলেন, “আমরা বৈঠক করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ওই সম্মেলনে যাব না। কারণ, আমাদেরকে অন্ধকারে রেখে কাদের স্বীকৃতি দেওয়া হবে, তার তালিকা তৈরি হচ্ছে। শুনছি, টিম পিকে এই কাজ করছে। ওরাই তাহলে সংগঠন করুক।” তাঁর এই সমালোচনা আসলে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকেই বিঁধছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত।
তবে এদিন মানবাজার দু’নম্বর ব্লকের দুই কার্যকরী সভাপতির মধ্যে একজন উপস্থিত ছিলেন। আরেক কার্যকরী সভাপতি মধুসূদন হাঁসদা ও যুব সভাপতি শান্তিগোপাল গঙ্গোপাধ্যায়কে ওই সম্মেলনে দেখা যায়নি। এই বিষয়ে বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন বলেন, “আমি দলের নির্দেশ মেনে সকলকেই সম্মান জানিয়ে আমন্ত্রণ করেছি। যাঁরা অনুপস্থিত ছিলেন, তাঁদের সকলের সঙ্গেই আমি ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করব।” তবে এদিন বান্দোয়ান মহাবিদ্যালয়ে এদিনের সম্মেলনে প্রবীণ কর্মীদের বিধায়ক নিজে স্বীকৃতি দেওয়ায় তাঁরা ভীষণ খুশি। জেলার ন’টি বিধানসভার প্রবীণ কর্মীরাই এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়ে আপ্লুত হন।
ছবি: অমিত সিং দেও ও জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.