ব্রতীন দাস: উত্তরের হাওয়ায় শীতের কাঁপন লাগতেই ওপার বাংলা থেকে উত্তরবঙ্গে এসে হাজির ওঁরা। ক্যালেন্ডারে এখনও কয়েকটা দিন বাকি থাকলেও ওঁদের পৌষের অতিথি বলা যেতেই পারে। বাংলাদেশের রাজশাহির বাগা এলাকার কামাল হোসেন, কামরুল ইসলাম, আবদুল রহিমদের হাতের জাদুতে তিস্তাপাড়ে এখন নলেন গুড়ের সুবাস।
[ বয়সে ছোট যুবকের সঙ্গে যৌনতা, স্ত্রীর মুণ্ডচ্ছেদ করে হাজতে স্বামী ]
সকাল থেকে গনগনে উনুনে পাক দিচ্ছে রস। ধীরে ধীরে রঙ আসছে। নতুন খেজুর গুড়ের গন্ধে গজলডোবায় এখন চারদিক ম-ম করছে। ভিনদেশি কারিগরদের হাতে তৈরি খেজুর গুড়ের পাটালি ও নলেনের স্বাদে পৌষ পড়ার আগেই যেন বাঙালির ‘তেরো পার্বনের’ মেজাজ এখন তিস্তাপাড়ে। কেন এমনটা হবে না? শীত মানে যেমন কমলালেবু। শীত মানে তো তেমনি পিঠে পুলি। আর খাঁটি নলেন গুড় ছাড়া পিঠে পুলি, পায়েস জমে নাকি! কিন্তু ভেজালের ভিড়ে বাজার চলতি খেজুর গুড়ে সেই মন মাতানো গন্ধটা উধাও হয়ে যাওয়ায় ইদানীং পৌষ পার্বণ উৎসবেও কেমন যেন ভাটা পড়েছে। অনেকেরই আফশোস, আগের মতো আর গুড় মিলবে কোথায়! যে জমে উঠবে পিঠে পুলি! ভোজন রসিকদের রসনায় তৃপ্তি আনতেই যেন ওপার বাংলা থেকে চলে এসেছেন কারিগররা। গত বছরও ওঁরা এসেছিলেন। কিন্তু নোটবন্দির জেরে বাজার ভাল ছিল না। এবার প্রথম থেকেই বাজার বেশ চাঙ্গা। চাহিদা ভালই, জানিয়েছেন কারিগররা।
[ কুয়োর জল আচমকা নীল, রানিগঞ্জে শোরগোল ]
গত তিন মাস ধরে কামাল, কামরুল, রহিমরা ডুয়ার্সের গ্রামে ঘুরে ঘুরে খেজুর গাছ খুঁজেছেন।শ’তিনেক গাছ লিজে নিয়েছেন। গাছ প্রতি মালিক পাবেন দু’কেজি করে খাঁটি খেঁজুর গুড়। যে আবার গুড় নিতে চাননি, গাছ প্রতি তিনি পেয়েছেন দু’শো টাকা।কিন্তু কীভাবে তৈরি হচ্ছে, মন কেমন করা সেই নলেন গুড়? কামাল বলেন, “দশ লিটার রস পাঁচ ঘণ্টা ধরে আগুনে জ্বাল দিয়ে এক কেজি গুড়ের উপাদান পাওয়া যায়।” কামরুল জানিয়েছেন, তাঁরা বংশ পরম্পরায় খেজুর গুড় তৈরি করে আসছেন। দু’টো পয়সা আয়ের জন্যই ভিসা পাসপোর্ট বানিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন।
নলেন গুড়ের খোঁজ পেয়ে ক্রেতাদের অনেকেই সকাল বিকেল ঢুঁ মারছেন তিস্তা নদীর পাড়ে। মুগ্ধ হয়ে দেখছেন গুড় তৈরির কৌশল। অনেকে আবার চেখে দেখার লোভ সামলাতে পারছেন না। মুখে দিলেই গলে জল হয়ে যাচ্ছে সেই গুড়। ফলে অনেক দিন পর চোখে মুখে যেন তৃপ্তির ছোঁয়া। একশো তিরিশ থেকে দেড়শো টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে নলেন গুড়। পর্যটকদের অনেকেও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে সারি দিয়ে মাটির হাঁড়ি। তাতেই প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা পাক দেওয়া রস।অর্ডার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন পাইকররা। ফলে দম ফেলার ফুরসত নেই রহিমদের। আর তাঁদের ব্যস্ততায় প্রাণভরে দম নিচ্ছেন বাসিন্দারা। নলেন গুড়ের মনমাতানো গন্ধে যে ম-ম করছে চারপাশ।
[ পুরু বরফে ঢাকল নাথুলার রাস্তা, দার্জিলিংয়েও তুষারপাতের সম্ভাবনা ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.