সৌরভ মাজি, বর্ধমান : প্রতি বছরই বাড়তি রোজগার হত। কেউ গাড়ি ভাড়া পেতেন। কেউ বা মিষ্টি বিক্রি করে অতিরিক্ত লাভ করতেন। অতিরিক্ত মিষ্টি তৈরির প্রস্তুতিও সেরে রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবার যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। বলা ভাল, করোনার কামড়ে মাথায় হাত গাড়ি ব্যবসায়ী ও মিষ্টান্ন বিক্রেতাদের। করোনার কারণে বসন্তোৎসব বাতিল করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বর্ধমানের মিষ্টান্ন ও গাড়ি ব্যবসায়।
দোল পূর্ণিমায় বর্ধমান থেকে হাজারখানেক গাড়ি প্রতি বছরই শান্তিনিকেতনে ভাড়ায় যায়। কলেজ পড়ুয়া থেকে বয়স্করা দল বেঁধে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ছোটেন বোলপুরে। কবিগুরুর দেশে বসন্ত উৎসবে মাতেন। কিন্তু এবার করোনার কারণে অনেকেই বোলপুর যাত্রা বাতিল করেছিলেন। অনেকেই আগের দিন থেকেই পৌঁছে যেতেন বোলপুরে। কিন্তু এবার বর্ধমানে গাড়ির স্ট্যান্ডগুলিতে খরিদ্দারের দেখা নেই। যাঁরা আগে থেকে বুক করেছিলেন তাঁদের বেশিরভাগই তা বাতিল করেছেন। আবার কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্যান্য জায়গা থেকে ট্রেন বা বাসে এসে বর্ধমান থেকেও অনেকে গাড়ি ভাড়া করে বোলপুরে যেতেন। এবার তাঁদেরও দেখা নেই মাছি তাড়াচ্ছে গাড়ির স্ট্যান্ডগুলি। বর্ধমান শহরের স্টেশন, ঢলদিঘি মোড়-সহ সর্বত্রই হতাশ গাড়ি মালিক ও চালকরা। তপন বিশ্বাস নামে এক গাড়ি ব্যবসায়ী বলেন, “প্রতিবারই বোলপুর যাওয়ার গাড়ি ভাড়ার ভাল চাহিদা থাকে। ফলে রেটও ভাল পাওয়া যায়। এবার করোনার জন্য বসন্ত উৎসব বাতিল করেছে বিশ্বভারতী। তাই অনেক বুকিং বাতিল হয়েছে। কেউ আসছেনও গাড়ি নিতে।”
গাড়ির মতোই হতাশ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা। অন্যান্য বছর শক্তিগড়ে ল্যাংচা বিক্রি প্রচুর বেড়ে যায় দোলের আগের দিন থেকে দোলের পরের দিন পর্যন্ত। একইভাবে বর্ধমান শহরের সীতাভোগ-মিহিদানারও ভাল চাহিদা থাকে এই সময়। ভাতারের বড়াচৌমাথার মণ্ডা বিখ্যাত। বোলপুর যাতায়াতকারীদের অনেকেই বড়া চৌমাথায় দাঁড়িয়ে মণ্ডা খেয়ে কিনে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু এবার করোনার কারণে সর্বত্রই ভাটা দেখা দিয়েছে। এক ব্যবসায়ী বলেন, “এই সময়টা ভাল চাহিদা থাকে বলে আমরাও আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখি জোগান স্বাভাবিক রাখতে। বাড়তি রোজগারও হয়। কিন্তু এবার সেটা হচ্ছে না।” বর্ধমান শহরে রঙ খেলা হয় দোলের পরদিন, অর্থাৎ হোলিতে। দীর্ঘকাল ধরে সেটাই রীতি। তাই শহরের অনেকেই দোলের দিন বোলপুরে রঙ খেলতেন। আর পরেরদিন নিজের শহরে। এবার বোলপুরের বসন্ত উৎসব বাতিল হওয়ায় হতাশ তাঁরাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.