সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রবিবার পুরুলিয়ার মানবাজার বিধানসভার পুঞ্চা ব্লক ময়দানে বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর সমর্থনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলযাত্রা ‘কামনা’ করলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। পুরুলিয়ার কুড়মি প্রার্থী, আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা) অজিতপ্রসাদ মাহাতোর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে তাঁকে কোর্টে তুলবেন বলেও হুমকি দিলেন শুভেন্দু। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা নেপাল মাহাতো কেন ভোটে দাঁড়িয়েছেন এই প্রশ্ন তুলে আক্রমণ করেন তাঁকেও। মুখ্যমন্ত্রীর জেলযাত্রা কামনা থেকেই আরও একবার পরিষ্কার ইডি, সিবিআই-সহ নানান কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ভর করেই রাজনীতি করছে গেরুয়া শিবির। তাই নির্বাচনী জনসভার মঞ্চ থেকেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর জেল যাত্রার কামনা করে বসলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। ২৪শেই এই তৃণমূল সরকারকে ‘প্রাক্তন’ করবেন বলেও হুমকি দেন শুভেন্দু। সন্দেশখালির ভিডিওকে ফের ‘ফেক’ বলে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে তাঁকেও আক্রমণ করেন। তাঁর কথায়, “দুটোকেই প্যাক করব। আইপ্যাক। আর ভাইপো।”
জঙ্গলমহলের চার জেলায় কুড়মিরা প্রার্থী দেওয়াই প্রথম থেকেই চাপে বিজেপি। গত এপ্রিলে বলরামপুর বিধানসভার পুরুলিয়া এক নম্বর ব্লকের শিবডি ময়দান থেকে পুরুলিয়া কেন্দ্রের কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতোকে কার্যত ‘ভোট কাটুয়া’ বলে তকমা দেন শুভেন্দু। তার প্রেক্ষিতে কুড়মি প্রার্থী বলেছিলেন, জাতিসত্ত্বার জন্য ভোটে দাঁড়িয়েছেন। পুরুলিয়ার মানুষকে কেন তিনি বঞ্চিত করে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পূর্ব মেদিনীপুরে নিয়ে গেলেন? এর প্রেক্ষিতে শুভেন্দু ওই কুড়মি প্রার্থীকে উকিল নোটিস পাঠান। সেই প্রসঙ্গ টেনে এদিন শুভেন্দু বলেন, “অজিত বাবু আপনি কেন ভোটে দাঁড়িয়েছেন জানি না! তৃণমূলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। আপনাকে উকিলের চিঠি পাঠিয়েছি। উত্তর দিতে পারেননি। মানহানির মামলা করব। কোর্টে আনব অজিতপ্রসাদ মাহাতোকে। তৃণমূলের বি টিম হিসাবে কাজ করছেন। এবার জিততে দেব না। ভোট ভাগ হতে দেব না।” পালটা দিয়েছেন কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতো। তিনি তাঁর আগের কথার সূত্র ধরেই বলেন, “পুরুলিয়াকে বঞ্চিত করে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরিগুলো পূর্ব মেদিনীপুরে কীভাবে গেল? কার সঙ্গে চুক্তি করে ওই চাকরি পূর্ব মেদিনীপুর গিয়েছে এর জবাব আগে দিতে হবে। তার পর আমি তাঁর অন্য কোনও প্রশ্নের উত্তর দেব।” সেই সঙ্গে অজিতবাবু মনে করিয়ে দেন, জাতিসত্ত্বার জন্যই তাঁদের লড়াই এবং ভোটে দাঁড়ানো।
ভোট ভাগ হওয়ার ইস্যুতেই এই কেন্দ্রের বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোকেও আক্রমণ করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “নেপালবাবু সম্মানীয় মানুষ। ভোটে লড়ছেন কার ভোট কাটার জন্য? কার সুবিধার জন্য? ছোট ঝালদা মিউনিসিপ্যালিটি ধরে রাখতে পেরেছেন? আপনি লড়বেন তৃণমূলের সঙ্গে। তপন কাঁদু খুন হয়েছিল। আমাদের এম পি, এমএলএ-রা গিয়েছিলেন। আমিও গিয়েছিলাম। আমরা সবাই গিয়েছিলাম। আর আপনি ভোট কেটে তৃণমূলের সুবিধা করে দিতে চাইছেন। যারা ভোট কাটার জন্য দাঁড়িয়েছেন দয়া করে তাঁদেরকে ভোট দিয়ে সুবিধা করে দেবেন না।” শুভেন্দুর এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো। তিনি বলেন, “এর থেকে তাহলে প্রমাণ বিজেপিওয়ালাদের কোনও ভোট নেই। তারা অন্যের ভোটের ওপর নির্ভরশীল। বিজেপি পার্টি এত দেউলিয়া হয়ে গেল? আমি কংগ্রেসের খানদানি লোক। ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী। তাহলে কি বিজেপিকে জেতার জন্য আমি ব্যবস্থা করে দেব? আমি বরং বলে রাখি যেখানে সভা করেছে সেই পুঞ্চাতে বিজেপি থার্ড হবে। তাদের কোন লোক নেই।” এদিন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের অন্যতম সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা প্রাক্তন সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “৪ জুনের পরই এখানে সভা করব। আর তাঁর বাড়িতে লাড্ডু পাঠিয়ে দিয়ে আসব।” সুজয় বাবু বলেন, “মাঠ ভরাতে পারল না। ভোটের ফলাফলের পর লাড্ডু পাঠানো তো দূর। তৈরি করারও লোক পাবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.