রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: শুক্রবার দুর্গাপুরে বিজেপির (BJP) রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকের প্রথম দিনেই পরপর ছন্দপতন। দলের শীর্ষ পদাধিকারীদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) প্রশংসায় রীতিমতো মুখর হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।
জানা গিয়েছে, এদিন রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh), রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ একাধিক শীর্ষনেতার সামনে শুভেন্দু রাস্তায় নেমে আন্দোলনের উপযোগিতা নিয়ে সরব হন। আত্মসমালোচনার সুরেই প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যত দুর্নীতি হয়েছে, তার তুলনায় রাস্তায় নেমে ক’টা আন্দোলন হয়েছে?’’ এই প্রসঙ্গেই শুভেন্দু বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তরিত করতে পেরেছিলেন বলেই সাফল্য এসেছে।’’ রাস্তার আন্দোলনের জেরেই বামেদের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তৃণমূলনেত্রীর প্রশংসা করে বিরোধী দলনেতার এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিকমহল। উল্লেখ্য, এদিন পদ্মফুলের বিধায়ক হয়েও এই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন দলের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায় (Hiran Chatterjee)। বস্তুত সেই কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘হিরণ-অজিত’ ছবি নিয়ে প্রতিনিধিদের প্রশ্নবাণে তপ্ত হয়ে ওঠে বিজেপি কর্মসমিতির বৈঠক। অবশ্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হিরণের অনুপস্থিতি নিয়ে সাফাই দিয়ে বলেন, ‘‘কাল বিদেশ যাবে বলে হিরণ আসেনি।’’
বৈঠকে এদিন সংখ্যালঘুদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর উপর জোর দেন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁদের সরিয়ে রাখলে হবে না। আমাদের তাদের কাছেও পৌঁছতে হবে।’’ সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘২৫টি আসনকে পাখির চোখ করে এগোতে হবে। নূন্যতম ৫০ হাজার বুথে পৌঁছতেই হবে।’’ তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে গেরুয়া শিবিরের কাছে বড় কাঁটা যে ঘরোয়া কোন্দল, তা এদিন ফের ধরা পড়ল। এদিন শহরের মিউনিসিপ্যাল মোড় থেকে মিছিল করে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব সিটি সেন্টারের অভিজাত হোটেল পর্যন্ত আসেন। মিছিলে সুকান্ত-দিলীপ-শুভেন্দুকে পাশাপাশি হাঁটতে দেখা যায়।
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা প্রশ্ন করলে দিলীপবাবু পাশের দিকে থাকা শুভেন্দু অধিকারীর দিকে দেখিয়ে দেন। বলেন, ‘ওই যে, ওই যে….’। এরপর টিভি চ্যানেলের বুম বিরোধী দলনেতার কাছে সাংবাদিকরা গেলে দিলীপকে গুরুত্ব না দিয়েই সঙ্গে সঙ্গে বাইট দিতে শুরু করেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, বৈঠক শেষে দিলীপ ঘোষকে ঘিরে ছিল আদি বিজেপি ও পুরনো ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতাদের ভিড়। উলটোদিকে শুভেন্দুকে ঘিরে থাকতে দেখা যায় দলের পদাধিকারী ও কয়েকজন বিধায়ককে।
আবার রাতে বৈঠকে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ অশোক দিন্দা রাজ্যের সাংগঠনিক সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীকে নিশানা করে বলেন, ‘‘অনেক জেলার সভাপতিরা নিচের তলায় যোগাযোগ রাখেন না। নিজেদের লোকেদের নিয়ে সংগঠন চালান।’’ তাকে থামিয়ে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সংগঠন অমিতাভ চক্রবর্তীর শেষপর্যন্ত সাফাই দেন, ‘‘এটা জেলার বৈঠক নয়। এখানে এসব বলবেন না। এইসব নিয়ে অনেকবার আলোচনা হয়েছে। তখন দু’জনকে থামাতে আসরে নামেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে।’’
কর্মসমিতির বৈঠকের প্রথম দিনে দলের রাজ্য পদাধিকারী ও মোর্চা সভাপতি এবং সাংসদরা ছিলেন। আজ অর্থাৎ শনিবার রাজ্য কমিটির বর্ধিত বৈঠক হবে। সূত্রের খবর, বর্ধিত বৈঠকে একাধিক পুরনো নেতা ডাক পাননি। অনেকে ডাক পেলেও দুর্গাপুরে আসছেন না। তবে গোষ্ঠীকোন্দল মেটাতে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল থেকে মঙ্গল পাণ্ডেরা যতই ঐক্য দেখানোর চেষ্টা করুন না কেন, তা যে বাস্তবে হওয়ার নয়, স্বীকার করেছে গেরুয়া শিবিরের বড় অংশ। দুর্গাপুরে এক কয়লা মাফিয়ার হোটেলে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকের আয়োজন কেন হল তা নিয়ে বৈঠকে জোর বিতর্ক দানা বাঁধে।
দু’দিনের বৈঠকে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। এদিকে, যেখানে বিজেপির লড়ার ক্ষমতা নেই, সেখানে পঞ্চায়েত ভোটে বামেদের সঙ্গে সমঝোতায় কার্যত সিলমোহর দিল দল। বঙ্গ বিজেপির রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকের ফাঁকে এদিন এক সাংবাদিক বৈঠকে রাম-বাম জোট নিয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচনে পতাকার কোনও গুরুত্ব থাকে না। একজন ব্যক্তিকে সামনে রেখে সাধারণত গ্রামের মানুষরা লড়াই করেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষ একত্রিত হয়ে লড়াই করবে আমার বিশ্বাস।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.