ছবি: শান্তনু দাস।
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: দেউচা পাঁচামি (Deucha-Pachami) কয়লা খনি প্রকল্প নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে জোড়া ফলায় বিদ্ধ বিজেপি। একদিকে বৃহস্পতিবার সেখানে প্রকল্পবিরোধী মিছিল করতে গিয়ে পাল্টা ‘গো ব্যাক’ স্লোগান শুনলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁদের কালো পতাকা দেখালেন আদিবাসীরাই। এই পরিস্থিতিতে সেখানকার আন্দোলন জারি রাখতে অন্য কোনও উপায় না দেখে বড় অঙ্কের আর্থিক প্রলোভন দেখানোর অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধেই। এই সংক্রান্ত একটি ফোনের অডিও ক্লিপ ভাইরাল (Viral) হয়েছে। যদিও তার সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
কলকাতার জনৈক প্রসেনজিতের সঙ্গে আর এক নেতার আদিবাসী ভাষায় সেই ফোনালাপে শোনা যাচ্ছে, আন্দোলন চালিয়ে যেতে কুড়ি লক্ষ টাকার ভাগ-বাটোয়ারার কথা। যে টাকা দিতে নাকি রাজি হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। বলা হচ্ছে, স্থানীয়দের মধ্যে সেই টাকা দিতে হবে, যাতে তাঁরা ধরনায় বসেন। সরকারের বিরোধিতা করেন টাকার বিনিময়ে। এনিয়ে সরব তৃণমূল (TMC)। শাসকদলের দাবি, “এলাকার মানুষ চান প্রকল্প। খনি ঘিরে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখা স্থানীয়দের কাছে তাড়া খেয়ে, কালো পতাকা দেখে এবার টাকার থলি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিজেপি। সেখানকার মানুষকে টাকা দিয়ে কিনতে চাইছে। সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামানোর এই প্রচেষ্টা অবশ্য সফল হবে না। কারণ বৃহস্পতিবার সুকান্তবাবু ও শুভেন্দুবাবু এখানে এসে বুঝে গিয়েছেন, মানুষ পাশে নেই।”
বৃহস্পতিবার বেলায় বিজেপির (BJP) বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে দেউচা-পাঁচামি এলাকার আদিবাসীরা জানিয়ে দিয়েছে, তাঁদের ভালর কথা বিজেপিকে ভাবতে হবে না। খনি নিয়ে কোনও রাজনীতি বরদাস্ত করবে না বীরভূম জমি-জীবন-জীবিকা ও প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভা। বিজেপি যখন রাইপুর থেকে দেউচায় পদযাত্রা করছে, তখনই আদিবাসীদের বড় অংশ একেবারে পথে নেমে বিরোধিতায় গেরুয়া শিবির। কালো পতাকা দেখিয়ে পালটা স্লোগান দিয়েছে। অথচ এই আদিবাসীদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধেই আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। যদিও বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, “এলাকার আদিবাসীরা আজ আমাদের মিছিলে আছেন। বিক্ষোভকারীদের পিছনে অন্য কারও মদত আছে। তবে আদিবাসীরা চাইলে আমরা দলীয় পতাকা ছাড়া আদিবাসীদের আন্দোলনে শামিল হতে রাজি আছি।”
এদিকে, রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা চন্দ্রনাথ সিনহা জানান, “জেলাকে অশান্ত করতে বারেবারে জেলায় আসছেন বিজেপি নেতারা। মানুষ তাঁদের প্রত্যাখ্যান করছে।” গত মাসে পাঁচামি অভিযানে এসে আদিবাসী বিক্ষোভের আঁচ পেয়ে আর দেউচা গ্রাম পেরননি বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। যদিও সেদিনও মহাসভার পক্ষ থেকে ‘শুভেন্দু দূর হঠো, আদিবাসীদের নিয়ে রাজনীতি মানছি না’ স্লোগান উঠেছিল এখানে। বৃহস্পতিবারের বিজেপির তথাকথিত ‘মহামিছিল’ আদৌ দেউচা-পাঁচামি কয়লা খনি এলাকার ধারপাশেও গেল না। ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের রাইপুরের আমবাগান থেকে বেরিয়ে দেউচা গিয়ে শেষ হল।
এদিকে মথুরা পাহাড়ি এলাকায় দুপুর থেকেই মহাসভা তির-ধনুক, জাতীয় পতাকা নিয়ে বিজেপি বিরোধী স্লোগানে শামিল হল। মহাসভার নেতা গণেশ কিসকু বলেন, ‘‘যে সব রাজ্যে বিজেপি শাসক দল, সেখানে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করেছে তারা। অথচ এখানে তারা আসছে আমাদের সমর্থনে। আমরা মহাসভায় কোনও রাজনীতিকে ঢুকতে দেব না। শুভেন্দু অধিকারী গো ব্যাক।’’ মহাসভার আরেক সদস্য রতন কিসকু জানান, ‘‘আমাদের ভাল আমরা বুঝব। বাইরের লোককে আমাদের সংস্কৃতি বাঁচাতে গ্রামে ঢুকতে দেব না।” এদিকে মহাসভার নেতা শিবলাল সোরেন ভাইরাল অডিও ক্লিপ প্রসঙ্গে বলেছেন, “এটি দুই রাজনৈতিক নেতার মধ্যে কথোপকথন। কিন্তু কেউই মহাসভার লোক নন। তাঁরা আদিবাসী ভাষায় কথা বললেও স্থানীয় কেউ নন। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ছড়ানো হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.