দীপঙ্কর মণ্ডল: প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত স্কুলে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র থাকছে না। গত বছর জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি সুভাষনগর স্কুলে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। চার শিক্ষক-সহ এক আধিকারিককে দোষী সাব্যস্ত করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ময়নাগুড়ি সুভাষনগর স্কুলে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র থাকবে না। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হরিদয়াল রায়ের ‘সাসপেনশন’ এখনও চলছে। হরিদয়ালবাবুর বক্তব্য, “কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আমি শাস্তি পেলাম। একতরফা মিডিয়া ট্রায়াল হল। একদিন নিশ্চয়ই সত্য প্রকাশিত হবে।”
সুভাষনগর স্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিদয়াল রায়, ইংরেজির শিক্ষক বিশ্বজিৎ রায়, অতিরিক্ত ভেনু সুপারভাইজার মন্টু রায় ও শিক্ষক সম্রাট বিশ্বাস পর্ষদের তদন্তে দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। তবে শাস্তি হয়েছে একমাত্র প্রধান শিক্ষকের। ওই স্কুলে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে প্রশ্নপত্র খোলা হয়েছিল। যে স্কুল ইনস্পেক্টর প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ করেছিলেন তাঁকে শোকজ করা হয়েছিল। সবার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে তদন্ত হয়। সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়ার জন্য সম্রাটকে সতর্ক করা হয়। এসআই বিশ্বনাথ ভৌমিক প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ পেয়েই তা পর্ষদকে জানান। তাঁকে শোকজ করে স্কুলশিক্ষা দপ্তর। সকাল ১১.১৫ মিনিটের আগে কোনওভাবেই প্রশ্নের প্যাকেট খোলার কথা নয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই প্যাকেট খোলা হয়েছিল। যা আইন বিরুদ্ধ। হরিদয়ালবাবু-সহ সবাই নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। অভিযোগ, প্রশ্ন পাঠিয়ে দেওয়া হত স্কুলেরই এক মেধাবী ছাত্রের কাছে। মেধাতালিকায় স্কুল যাতে উঠে আসে সে কারণেই প্রধান শিক্ষক এই কাজ করতেন বলে অভিযোগ। হরিদয়ালবাবুর বক্তব্য, “এক ছাত্রকে ভৌত বিজ্ঞানে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছে। তাহলে ছাত্রটি অঙ্কে একশোয় একশো এবং জীবন বিজ্ঞানে নিরানব্বই পেল কী করে। আমার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
গতবছর প্রবল বিতর্ক মাথায় নিয়ে মাধ্যমিকে শেষ হয়। হোয়াটসঅ্যাপে ভুয়ো প্রশ্ন ছড়ানো হয়। প্রথম ভাষা পরীক্ষায় হিন্দি প্রশ্নের একটি অংশ সিলেবাসের বাইরে থেকে আসায় ক্ষোভ দেখায় পড়ুয়ারা। মালদহের এক পরীক্ষাকেন্দ্রে এক ছাত্রীকে মুখ বাঁধা ও হাত ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন বাইরে বেরোয়। হাওড়ার একটি পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে দুষ্কৃতীরা বোমা ফাটায়। যার জেরে আতঙ্ক ছড়ায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দুই ছাত্রীর কাছে মোবাইল পাওয়া যায়। প্রতিবন্ধী এক ছাত্রকে প্রমাণ করতে হয় সে দৃষ্টিহীন। গতবছর মাধ্যমিকে মোট পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল ২৮১৯। পরীক্ষার্থী ছিল ১১ লক্ষের বেশি। চলতি বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। চলবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মোট পরীক্ষার্থী বা পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা এখনও ঘোষণা না করলেও বিতর্ক এড়াতে এবার আরও সতর্ক হচ্ছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.