সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ডহারবার: সরকারি নির্দেশেই ফলতার এক বেসরকারি হাসপাতালকে রাতারাতি পরিণত করা হয়েছিল করোনা সন্দেহে আনা রোগীদের আইসোলেশন বিভাগে। জ্বর ও সর্দি-কাশির মত প্রাথমিক উপসর্গ থাকা দুই রোগীর চিকিৎসাও হয় সেখানে। তাঁদের লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর জানা যায় কারওর শরীরেই বাসা বাঁধেনি ওই মারণ ভাইরাস। ছুটিও দিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। কিন্তু আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না সাধারণ মানুষের। সংক্রমণের ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া প্রিয়জনকে চিকিৎসার জন্য আর ওই হাসপাতালে ভরতিই করাতে রাজি হচ্ছেন না কেউ। আর তাতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ফলতার সহরারহাটে একটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা মোকাবিলায় আইসোলেশন বিভাগ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। হাসপাতালটির পরিকাঠামোগত নানা সুযোগসুবিধার কথা ভেবেই সরকারি স্তরে সেটিকে আইসোলেশন বিভাগ করার প্রস্তাব দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। সেই প্রস্তাব গৃহীতও হয়। সরকারি নির্দেশ মেনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও ভরতি থাকা সমস্ত রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করে। এরমধ্যেই করোনা সন্দেহে আসা দুই অসুস্থ ব্যক্তিকে ওই হাসপাতালে ভরতি করা হয়। চিকিৎসা চলাকালীন ওই দুই রোগীর লালারস সংগ্রহ করে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় বেলেঘাটা নাইসেডে। খুশির খবর, দু’জনেরই ‘করোনা নেগেটিভ’ রিপোর্ট আসে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দিন কয়েক পর সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ওই দুই ব্যক্তিকে হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়। আর এর মধ্যেই রাজ্য সরকার ওই হাসপাতাল থেকে আইসোলেশন বিভাগটি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকারি এই সিদ্ধান্ত জানার পর ওই হাসপাতালে পুনরায় আগের মত রোগী ভরতির কথা ভাবে। সেইমতো হাসপাতালের ভিতর ও বাইরেটা জীবাণুমুক্তও করা হয়। কিন্তু ওই হাসপাতালে করোনার জীবাণু সংক্রমিত হয়েছে এই গুজবে কোনও রোগীই আর ভরতি হচ্ছে না। এতেই মাথায় হাত পড়েছে ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
হাসপাতালের কর্ণধার ডা: জাহির ইসলাম জানিয়েছেন, এই ধরনের গুজবের জেরে কোনও রোগীকেই আর তাঁদের আত্মীয়-পরিজনেরা এই হাসপাতালে ভরতি করতে রাজি হচ্ছেন না। তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন, তাঁর হাসপাতালে কোনও করোনা আক্রান্ত রোগী ভরতি হয়নি। যে দু’জন রোগীকে করোনা সন্দেহে রাখা হয়েছিল তাঁদের রিপোর্টও নেগেটিভ এসেছে। সুস্থ হয়ে তাঁরা বাড়িও ফিরে গিয়েছেন। তাই আশঙ্কার কোনও কারণই নেই। যদিও বহু প্রচার করে তিনি এখনও পর্যন্ত সাধারণ মানুষের আতঙ্ককে কাটাতে পারেননি। ফলে বহু ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁকে। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের হাসপাতালে বসে বসেই বেকার সময় কাটাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। উল্লেখ্য, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার এক বিস্তীর্ণ অংশের মানুষের ভরসা ছিল এই বেসরকারি হাসপাতাল। ডায়ালিসিস-সহ অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসা করাতেও আসছিলেন রোগীরা এই সেদিনও। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতাভুক্ত সাধারণ মানুষও এই হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ পেতেন। কিন্তু করোনা আতঙ্ক সাধারণ মানুষকে সেসব সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও অজানা, কবে আবার হুঁশ ফিরবে সাধারণ মানুষের, স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.