স্টাফ রিপোর্টার: জোট না হলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতাম৷ সিপিএম একা নয়, রাজ্য থেকে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যেত অন্য বাম দলগুলিও৷ রাজ্য কমিটির বৈঠকের সূচনাতেই পার্টির সাংগঠনিক দৈন্যতার কথা স্বীকার করে নিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র৷ কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা না হলে বহু বুথে এজেণ্ট পর্যন্ত দেওয়া যেত না বলে রিপোর্ট পেশ করেন সূর্যকান্ত৷ এদিন রাজ্য সম্পাদকের বেঁধে দেওয়া সুরেই জেলার নেতারা কার্যত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন৷ জোটের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে কেরল লবির সর্দার প্রকাশ কারাত, এম এ বেবিদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দাগেন রাজ্য কমিটির সদস্যরা৷ এমনকী পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত সিদ্ধান্ত গীতা বা কোরান নয় বলে কটাক্ষ করেছেন প্রাক্তন এক সাংসদ৷
জোটের পক্ষে সওয়াল করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রতিনিধি শমীক লাহিড়ী় বলেছেন, “নির্বাচনের পর যখন রাজ্যের মানুষের উপর অত্যাচার নেমে আসছে তখন পলিটব্যুরোতে জোট নিয়ে বিতর্ক উঠছে৷ এটা হাস্যকর৷” ২০০৪ সালে ইউপিএ সরকারকে সমর্থনের প্রসঙ্গ টেনে শমীক প্রশ্ন তোলেন, “কোন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেসকে সমর্থন করা হয়েছিল৷ তখন কেন কংগ্রেসের শ্রেণিচরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়নি৷ এখন কেন হচ্ছে৷” কলকাতা জেলার এক নেতা আক্রমণের রেশ ধরে বলেন, “আমরা এই নির্বাচনে মানুষের মনে ছাপ ফেলতে পেরেছি৷ যেটা প্রত্যাশিত ছিল না৷ সেই বাড়তি শক্তি দেখাতে পেরেছি৷ জোট না হলে তা সম্ভব হত না৷ অথচ ভোটের ময়দানে না থাকা কিছু নেতা ঠান্ডা ঘরে বসে জোটের প্রয়োজন ছিল কি না তা নিয়ে চর্চা করছেন৷ এটা দুর্ভাগ্যজনক৷” বাঁকুড়ার প্রাক্তনমন্ত্রী দেবলীনা হেমব্রম বলেন, জোট হওয়ার পর জেতার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী ছিলাম৷ ভোটের আগে আলিমুদ্দিনে সেই রিপোর্টও দিয়েছিলাম৷ ফলে জোটের প্রয়োজন আছে বলেই মনে করি৷ নইলে যত আসন মিলেছে, তার অর্ধেকও পেতাম না৷ অস্তিত্বের সংকটে পড়তে হত৷” বাঁকুড়ার আরেক প্রতিনিধি বলেন, ধুঁকতে থাকা সংগঠন চাঙ্গা হয়েছে জোটের ফলেই৷ জোট সাড়া ফেলেছে৷”
তবে বৈঠকে আগাগোড়া সরব ছিলেন জোট বিরোধীরাও৷ কংগ্রেসের সঙ্গে গিয়ে জাতও গেল, পেটও ভরল না বলে জোটকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তাঁরা৷ জোট বিরোধী বর্ধমান জেলার নেতা, গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়েছে, না ফ্রণ্ট গঠন হয়েছে, না আসন সমঝোতা হয়েছে তা স্পষ্ট করেনি নেতৃত্ব৷ এখনও পর্যন্ত কংগ্রেস প্রসঙ্গে অবস্থান স্পষ্ট নয় দলের৷ বর্ধমানের আরেক নেতা আভাস রায়চৌধুরি বলেন, মতাদর্শগত ও বাস্তব পরিস্থিতির ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ বয়েছে পার্টি৷ বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর জোটকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন বহু বাম নেতা-কর্মী৷ প্রকাশ্যে সমালোচনা করা হয়েছিল রাজ্য সম্পাদকের৷ এমনকী, বামফ্রণ্টের মিটিংয়েও ঝড়ের মুখে পড়েছিলেন চেয়ারম্যান বিমান বসু৷ সিপিএমের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক মিটিংয়ে ফ্রণ্ট ছেড়ে বেড়িয়ে আসার হুমকি দিয়েছিলেন শরিকরা৷ শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক ছেদ করে আন্দোলন থেকে কংগ্রেসকে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় বামফ্রণ্ট৷ যদিও সিপিএমকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখে শরিকরা৷ এই একই হুঁশিয়ারি এদিন শোনা গেল রাজ্য কমিটির বৈঠকেও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.