দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: আয়লা, বুলবুলের পর আমফান। আরও একটা ঝঞ্ঝার মুখে পড়তে চলেছে সুন্দরবন অঞ্চল। আমফান আছড়ে পড়ার আগে তার প্রভাবে এইসব এলাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে বৃষ্টি। নদীগুলির জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যানিং থেকে কাকদ্বীপ – সর্বত্র নেওয়া হয়েছে চূড়ান্ত সর্তকতা। ইতিমধ্যেই সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা এবং নদী বাঁধের কাছে বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষকে সরানো হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। দুশ্চিন্তা আর আতঙ্কের প্রহর কাটাচ্ছেন সুন্দরবন তথা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কয়েক লক্ষ বাসিন্দা।
আবহাওয়া দপ্তরের নির্দেশিকা বলছে, সুন্দরবন তথা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিভিন্ন এলাকাতে বিরাট ক্ষয়ক্ষতি করবে সুপার সাইক্লোন আমফান। শুধু বিরাট অঙ্কের ক্ষতি হবে তাইই নয়, প্রাণহানিও ঘটতে পারে বহু মানুষের। যেমনটা দেখা গেছিল আয়লার সময়। কিন্তু আমফান ক্ষেত্রে সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি ২০০৯ সালের মে মাসে হওয়া আয়লার থেকেও ভয়ঙ্কর হতে পারে। সুন্দরবনের ক্যানিং মহকুমার কুমিরমারি, মোল্লাখালি, সাতজেলিয়া, ঝড়খালি, এবং কাকদ্বীপ মহকুমার সাগর ,ঘোড়ামারা, ফ্রেজারগঞ্জ , বকখালি, সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সরানো হয়েছে বহু মানুষকে। কাউকে রাখা হয়েছে বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে, আবার কোথাও বড় বড় স্কুল বাড়িতে তাঁদের ঠাঁই হয়েছে।
তবে নিরাপদ আশ্রয় গিয়েও আতঙ্ক কাটছে না সাধারণ মানুষের। কারণ, সাগরের ঢেউ ১৫ থেকে ১৮ ফিট উচ্চতায় উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদি ঢেউয়ের উচ্চতা আবহাওয়া দপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী হয়, তাহলে সাগরের বহু দ্বীপ এবং তার সংলগ্ন এলাকা, অন্যদিকে গোসবা ব্লকের বিভিন্ন দীপ একেবারে জলের তলায় চলে যাবে। তছনছ হয়ে যাবে সুন্দরবনের জনজীবন। শুধু সুন্দরবন নয়, দক্ষিণ ২৮ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই ঝড়ের ফলে।
যে সমস্ত এলাকাগুলিতে দুর্গত মানুষদের রাখা হচ্ছে সেই বাড়ি গুলোতে ইতিমধ্যেই স্যানিটেশনের কাজ করা হয়েছে। কারণ বহু ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা হয়েছিল ভিন রাজ্য থেকে আসা বাসিন্দাদের জন্য। ইতিমধ্যেই বহু এলাকায় রান্না করা খাবার সরবরাহ করতে শুরু করেছে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত। যে সমস্ত মানুষরা আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন আশ্রয়স্থলগুলিতে সেখানে এই খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং প্রাণহানি রুখতে অসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তর ও জাতীয় বিপর্যয় কমিশনের কর্মীরা পৌঁছেছেন সুন্দরবন অঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপে। এই দ্বীপগুলিতেই ক্ষতির আশঙ্কা সর্বাধিক। অন্যদিকে সবেমাত্র নদীতে কোটাল মুখ শুরু হওয়ায় ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস দেখা দিচ্ছে নদীগুলি তে । আর এর ফলে বহু নদী বাঁধের ধ্বস নামতে শুরু করে দিয়েছে। মঙ্গলবার বিভিন্ন নদীতে যে পরিমাণ জল বেড়েছে তাতে বড়োসড়ো দুর্যোগের আশঙ্কা করছে সুন্দরবন বাসিও। কারণ বহু মাটির নদী বাঁধ এখনো পর্যন্ত সেইভাবে মেরামতি হয়নি এ বছর। লকডাউন এর কারণে থমকে ছিল মেরামতির কাজ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.