সুব্রত বিশ্বাস, মগরাহাট: উস্তি হয়ে উত্তর কুসুমপুরের দিকে এগিয়ে চলল মোটরভ্যান। চালক প্রৌঢ়। তাঁর গলায় তখন পুরনো দিনের কথা বাজছে – রাস্তাঘাট বলতে কিছুই ছিল না। মাঠের আল ভেঙে চলতে হত। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও জুটত না খাবার। তার উপর ছিল ডাকাতের উপদ্রব৷এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা! একে অনাহারে, পেটে কিছু দেওয়ার জন্য টাকা উপার্জন করলেই তা নিয়ে যেত ডাকাতরা।
মগরাহাট পশ্চিম কেন্দ্রটি চিরকালই কুখ্যাত ডাকাতদের প্রাবল্যের জন্য। এক পুলিশকর্তা বলেছিলেন, “রাজ্যে পাঁচজন ডাকাত ধরা পড়লেই দেখা যেত তাদের একজন অবশ্যই মগরাহাটের বাসিন্দা।”
এক সময় ডাকাতিতে গ্রামকে কুখ্যাত করে ফেলেছিল স্থানীয় ‘মাঠাল’, ‘শেয়ালিরা’। আজ এখনও আক্ষেপের সুর তাদের গলায়, বলেন: “অপরাধ করেছিলাম বাধ্য হয়েই, পেটের জ্বালায়।” আজ শ্রম দিয়ে উপার্জন করে ভালই আছি। নাম জানাতে অস্বীকার করেন এক ট্রেকার চালক। ডাকাতির পদ্ধতি জানালেন তিনিই।ছ’-সাত জন বা তারও বেশি সংখ্যক ডাকাত থাকত দলে। ডাকাতিতে যাওয়ার আগে মা কালীর থানে পুজো দিয়ে এক এক জনের নামে ফুল রাখা হত। ডাকাতি করতে গিয়ে মারা গেলে তার নামের ফুল সৎকার করা হত। হিন্দু হলে দাহ, মুসলিম হলে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হত। এখন আর সে চল নেই। নেই ডাকাতিও।
মগরাহাট পশ্চিমের সিরাকোল, শেরপুর, ইয়ারপুর, শ্রীচন্দা, রঙ্গিলা বাঁধ, হরিহরপুর, উস্তি, উত্তর কুসুম, কালিকাপোঁতা, লক্ষ্মীকান্তপুর, একতারা, নেতরা ১২টি পঞ্চায়েত এলাকার মানুষজন এখনও চরম দারিদ্র্যর মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তবে ডাকাতি করেন না।
স্থানীয় বিধায়ক গিয়াসুদ্দিন মোল্লার কথায়, একটিও কারখানা নেই এই অঞ্চলে। অধিকাংশ মানুষই প্রান্তিক চাষি বা দিনমজুর। তবে রাস্তাঘাট পাকা হওয়ায় বহু মানুষ এখন মোটরভ্যান, ভ্যানরিকশা, টোটো চালিয়ে জীবনধারণ করছেন। ২ লক্ষ ১০ হাজার ভোটার এখানে। ডাকাতি আর কারও পেশা নয়। তাঁর দাবি, ১৩৩ কিলোমিটার বড় রাস্তার ১০০ কিলোমিটারই পিচের। ছোট রাস্তাগুলিও পাকা ঢালাই করা। এই রাস্তাই জীবনধারার বদল এনেছে। রিকশা, ভ্যান চালাচ্ছে লোকজন।
উস্তি ব্লকের লক্ষ্মীকান্তপুরে এক সময় ১০-১৫ দিন ধরে ডাকাতি চলত। স্থানীয় তপন হালদারের কথায়, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। একটু স্বচ্ছল। উপরি হিসাবে ছিল ১৯৭২ সালের আগে বিধায়ক শুধেন্দু মণ্ডলের বাড়ি ছিল এই লক্ষ্মীকান্তপুরে। ফলে তা ডাকাতদের টার্গেট ছিল। টানা ১০-১৫ দিন ধরে চলত ডাকাতি। গ্রামের পর গ্রাম শূন্য, মেয়েদের সম্মানহানির হিসাব ছিল না।” বাম জমানায় এই অপরাধ আরও বেড়েছিল বলে দাবি গিয়াসুদ্দিন মোল্লার। তিনি উস্তির দলীয় কার্যালয়ে বসে বললেন, “শুধেন্দু মণ্ডলের দোতলা বাড়ি দখল নিয়ে সিপিএম ডাকাতদের এনে পুষেছিল। সামাল দেওয়ার উপায় ছিল না। পুলিশই ঘটনাস্থলে যেতে ভয় পেত। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা বেড়েছে। সব প্রশাসনিক কার্যালয় উস্তিতে একই ছাদের তলায় আনায় এখন প্রশাসনের কাজেও সুবিধা হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: কে জিতছে পুরুলিয়ায়? লাখ টাকার বাজি বিজেপি-তৃণমূল সমর্থকের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.