গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: ঘূর্ণিঝড় ‘যশে’ (Cyclone Yaas) ডোবা বানভাসি সুন্দরবনের (Sunderbans) মানুষের এখন বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘শৌচালয়’ ও ‘শৌচক্রিয়া’। দিন পেরিয়ে কখন সন্ধে নামবে, সেই অপেক্ষাতেই থাকেন গ্রামের আমিনা, মিনা, শেফালী, শ্যামলী, ঊষা, সুন্দরীরা।
গত বছর আমফানের রেশ কাটতে না কাটতেই হাজির হয় ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। সঙ্গে দোসর পূর্ণিমার ভরা কোটাল। ফলে জোড়া ফলায় বিদ্ধ উপকূলবর্তী সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। নদীবেষ্টিত সুন্দরবনের মাতলা, রায়মঙ্গল, কালিন্দী, ডাসা, বিদ্যাধরী, গৌড়েশ্বর, কলাগাছির মতো নদীগুলোর বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। জল উপচে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। জলের তোড়ে কোথাও ভেসে গিয়েছে ঘরবাড়ি। আবার কোথাও পুরোটা বা অর্ধেক মুখ থুবড়ে পড়েছে টালি বা এডবেস্টরের ছাউনি দেওয়া চাল। তাই বাধ্য হয়েই হয় উঁচু রাস্তা, নাহলে নদীর বাঁধে ত্রিপল টানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন জলমগ্ন সুন্দরবনের হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি ১-২ , মিনাখাঁর মতো ব্লকের ভেসে-যাওয়া গ্রামের বহু বাসিন্দারা। খাবার, পানীয় জল, জল দূষণের পাশাপাশি এখন ঘর ছাড়া বানভাসি ওই মানুষগুলির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘শৌচক্রিয়া’। বিশেষ করে মহিলারা রীতিমতো সমস্যায় পড়েছেন। পুরুষেরা মাঠে-ঘাটে শৌচকর্ম সারলেও দিনের বেলায় মহিলারা বিপাকে পড়ছেন। তাই অপেক্ষা করতে হয়, কখন অন্ধকার নামবে৷ এখন রাতের অন্ধকারেই শৌচকর্ম সারতে হচ্ছে তাঁদের।
প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, জলমগ্ন সুন্দরবনের হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি ১-২, মিনাখাঁর মতো সুন্দরবনের ব্লকগুলিতে অধিকাংশ মানুষই সরকারি সুলভ শৌচালয় প্রকল্প থেকে বঞ্চিত। তাই কোথাও বাড়ির সীমানার শেষ প্রান্তে চারটি খুঁটি পুঁতে পেপার টানিয়ে সেখানেই সারেন শৌচকর্ম। কোথাও বা এখনও গাড়ু হাতে মাঠে যেতে হয় মানুষকে। কিন্তু বিপর্যয়ের বেশ কয়েক দিন কাটলেও এখনও জল নামেনি বহু এলাকায়। অনেক জায়গায় ত্রাণকেন্দ্রে নেই ‘শৌচালয়’। কোথাও বা মাথাপিছু ১০০ জনের জন্য একটি ‘শৌচালয়’। প্রশাসনের তরফে পর্যাপ্ত পরিবেশবান্ধব শৌচাগারের দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি অনেক জায়গাতেই। তাই শৌচকর্ম করতে বেগ পেতে হচ্ছে মানুষকে। কখন দিন ফুরিয়ে সন্ধে নামবে সেই অপেক্ষাতেই থাকতে হয় হিঙ্গলগঞ্জের মামুদপুর, সাহেবখালি, দুলদুলি, রূপমারি, সন্দেশখালির ভোলাখালি, কালিনগর, জেলেখালি, মনিপুর, কোড়াকাটি, সেহারা রাধানগর মতো পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামের বাসিন্দাদের।
স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তারা জানান, আমাদের কাছেও অভিযোগ আসছে। যে জায়গাগুলো থেকে অভিযোগ আসছে, সেখানে অস্থায়ী শৌচাগার তৈরির ব্যবস্থা করেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বায়ো-টয়লেট বসানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। অনেক অভিযোগ আমাদের কান পর্যন্ত এসে পৌঁছাচ্ছে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.