প্রতীকী ছবি
দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: বিধ্বংসী আয়লার পর বিভিন্ন দ্বীপে দ্বীপে বানানো হয়েছিল বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র। আর সেই বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলিতে আশ্রয় নিয়ে বহু মানুষ রক্ষা পেয়েছিলেন ফণী বা বুলবুলের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে। শুধু মানুষ নয় প্রাণে বেঁচে ছিল শত শত গবাদি পশুও। কিন্তু এবার কি হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংকট। কারণ ইতিমধ্যেই সেই সমস্ত বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলিতেই বানানো হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। আর তার ফলে আমফান দুর্গত মানুষদের কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনের। তবে প্রাথমিকভাবে কিছু স্কুলে দুর্গত মানুষদের রাখার পরিকল্পনা করা হলেও তাতে সমস্যা মিটবে কি না তা বুঝতে পারছেন না প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাব থেকে বাঁচাতে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, কাকদ্বীপ, ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি এবং উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি ও হিঙ্গলগঞ্জ থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানো শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দ্বীপে পৌঁছে গিয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা। প্রায় লক্ষাধিক মানুষকে এবার সরাতে হবে বিভিন্ন রেসকিউ সেন্টারগুলিতে। কারণ ঝড়ের তীব্রতা আগের কয়েকটি ঝড়ের থেকে যথেষ্ট বেশি থাকবে এমনটাই মনে করছে আবহাওয়াবিদরা। আর সেই কারণে বহু মানুষকে উপকূল থেকে সরিয়ে আনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তাই উপকূল থেকে সরিয়ে আনার পর তাদের আপাতত রাখা হচ্ছে বিভিন্ন প্রাথমিক এবং উচ্চবিদ্যালয়গুলিতে। তবে সমস্যা হচ্ছে সেখানে জেনারেটরের বন্দোবস্ত নেই।
তবে বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলিতে রয়েছে জেনারেটর, শৌচালয়, জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। এমনকি প্রতিটা বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলিতে গবাদি পশু বেঁধে রাখার ব্যবস্থাও আছে। আয়লার সময় দেখা গিয়েছিল প্রায় একতলা বাড়ির সমান জল হয়েছে কোথাও কোথাও। আর তার ফলে টিউবয়েল ডুবে যাওয়ায় পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছিল বহু এলাকায়। আয়লার পর বানানো এই সমস্ত বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলিতে জলের কলকে যথেষ্ট উঁচু এলাকায় রাখা হয়েছে। ভবনটি বানানো হয়েছিল মাটি থেকে প্রায় আট-ন’ফুট উপরে। সুন্দরবন এলাকায় হুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ টি। যার মধ্যে ৪০টি পরিযায়ী শ্রমিকদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। তাই কার্যত নিরুপায় হয়ে আমফান প্রভাব ফেলতে পারা এলাকার মানুষদের স্কুলে রাখতে হচ্ছে।
গোসাবা ব্লকের বিডিও সৌরভ মিত্র বলেন, “আমার ব্লকে যতগুলি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র ছিল সবকটি প্রায় পরিযায়ী শ্রমিকদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা হয়েছে। অগত্যা স্কুলগুলিতেই আমফান দুর্গতদের রাখা বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।” এছাড়াও আমফান থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। কারণ যদি আমফান সেভাবে প্রভাব ফেলে তবে বহু মানুষকেই বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় দিতে হবে। সেক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ববিধি কতটা মানা যাবে, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সেক্ষেত্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা।
ঝড়ের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইতিমধ্যেই প্রতিটি পঞ্চায়েতকে জরুরি ভিত্তিতে কন্ট্রোলরুম খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে সমস্ত নদীবাঁধগুলি খুব খারাপ অবস্থায় আছে সেগুলি দ্রুত মেরামত করার কথা বলা হয়েছে। দুর্গত এলাকা থেকে মানুষজনকে সরানোর জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কিছু স্পিডবোট মজুত করা হয়েছে। সম্ভাব্য দুর্গত এলাকাতে অসামরিক দপ্তরের কর্মীদেরকে আনা হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় দলের সদস্যরাও মজুত আছেন বিভিন্ন জায়গায়। সব মিলিয়ে প্রশাসন প্রস্তুত আমফান মোকাবিলায়।
এ বিষয়ে সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বলেন, “বেশ কিছু এলাকায় যেহেতু কোয়ারেন্টাইন সেন্টার আছে, তাই আমরা প্রতিটা স্কুলকে খুলে রাখার ব্যবস্থা করেছি। সোমবার বিকেলের মধ্যে সমস্ত জায়গাতে পর্যাপ্ত পানীয় জল ও শুকনো খাবার মজুত রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্কুলগুলোতেও মানুষ আশ্রয় নেওয়ার পর যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য আলোর ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.