বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে (Nandigram) ‘অপারেশন সূর্যোদয়’-এর বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে বারবার ফিরে আসে। একুশের ভোটে এই হাইভোল্টেজ কেন্দ্রে ফের নতুন করে যেন বহু প্রশ্ন তুলে দিল সেই ইতিহাস। সেদিন গুলি কারা চালিয়েছিল? তৎকালীন বাম সরকারের নির্দেশে পুলিশ নাকি অন্তর্ঘাত ছিল? সোমবার নন্দীগ্রাম থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পরিবর্তিত বয়ানে ফের সামনে এল সাত বছর আগেকার ঘটনা। তৃণমূল নেত্রীকে পালটা দিতে ছাড়লেন না সিপিএম নেতারাও। যার জেরে নন্দীগ্রামে ভোটের মাত্র ২ দিন আগে পুরনো ইতিহাস নিয়ে আলোচনায় সরগরম হয়ে উঠল রাজ্য রাজনীতি।
সোমবার নন্দীগ্রামের ঠাকুরচকে সভা করতে গিয়ে ৭ বছর আগে ফের নন্দীগ্রামের ইতিহাসের প্রসঙ্গ টানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওইদিন পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে একেবারে সরাসরি অধিকারী পরিবারের দিকে আঙুল তোলেন তিনি। যা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। সভা থেকে ফের তিনি বলেন, “নন্দীগ্রাম আন্দোলনে ৪১ জনের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা চালু করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে শেখ সুফিয়ানের নামও রয়েছে। কিন্তু ওই গদ্দারদের নাম নেই। কেন নেই? কারণ, ওরা আন্দোলনের সময় ছিলই না।” মমতার দাবি, স্মরণীয় সেই ১৪ মার্চে শেখ সুফিয়ানকে ডেকে এনেছিলেন শুভেন্দু, কিন্তু আন্দোলনে শামিল হননি। অর্থাৎ ফের তৃণমূল নেত্রী দাবি করেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনে অধিকারী পরিবারের কোনও ভূমিকাই নেই। প্রকারান্তরে এও স্বীকার করে নেন যে ওইদিন তৎকালীন সিপিএম নেতাদের কথায় প্রভাবিত হয়ে পুলিশ গুলি চালায়নি, বরং তাঁদের গ্রামে প্রবেশের পথ সুগম করে দিয়েছিল অধিকারী পরিবারের সদস্যরাই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই নয়া মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এই মন্তব্যের বিরোধিতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সিপিএম নেতারা। সুজন চক্রবর্তীর (Sujan Chakraborty) কথায়, ”তাহলেই বোঝা যাচ্ছে, নন্দীগ্রামে সেদিন কত গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এতদিন বলছিলেন, চটি পরে, সাধারণ জামাকাপড় পরে পুলিশ ঢুকেছিল গ্রামে। আর আজ বলছেন, ওদের ঢুকতে সাহায্য করেছিল অধিকারী পরিবারের সদস্যরা। আমাদের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, একজন মানুষের সমর্থন ছাড়াও আমরা কোনও জমি নেব না। সেদিন ওঁরা কীভাবে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। এখন তো বোঝাই যাচ্ছে, তৃণমূল-বিজেপির যৌথ ষড়যন্ত্র ছিল সেদিন।”
বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে এতটাই ঝড় তুলেছে যে এ নিয়ে সন্ধের পর বিবৃতিও দিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya)। নিজের বক্তব্যের একটি অংশে তিনি লিখেছেন, ”নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরে এখন শ্মশানের নীরবতা। সেসময়ের কুটিল চিত্রনাট্যের চক্রান্তকারীরা আজ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে আজ কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.