সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: না আছে জমি, না আছে বাড়ি। স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ শূন্য। নির্বাচনে লড়াই করার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন৷ দলের তরফে সেখানে জমা পড়েছে মাত্র পাঁচশো টাকা৷ তা নিয়েই ভোটের ময়দানে নেমেছেন পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের এসইউসিআই প্রার্থী রঙ্গলাল কুমার। দেশজুড়ে লোকসভা ভোটের ময়দানে একেবারে ব্যতিক্রমী চরিত্র।
বয়স আটচল্লিশ। মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি। ক্ষেতমজুর পরিবারের এই সন্তানের নিজস্ব বলতে উপহার পাওয়া একটা দামি হাতঘড়ি। আর কিছু জামা, ট্রাউজার, ব্যাগ-সহ কয়েকটা ফাইল, পেন আর দলের বইপত্র। এটাই সংসার রঙ্গলালের। তাই মঙ্গলবার পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবনে মনোনয়ন পেশ করতে এসে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির কলামটিতে ইংরাজিতে তিনি লিখলেন – নিল৷ যা দেখে হতবাক কমিশনের আধিকারিকরাও।
দেশজুড়ে ভোট প্রার্থীদের ‘ক্যাশ ইন হ্যান্ড’ থেকে সোনাগয়না-সহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা যে দীর্ঘ। হাজার ছাড়িয়ে লাখ এমনকী সমস্ত সম্পত্তি মিলিয়ে কোটিতেও ঠেকছে। সেখানে মাত্র পাঁচশো টাকা হাতে নিয়ে প্রার্থীর ভোট প্রচারে নামা কার্যত নজিরবিহীন। মঙ্গলবার তিনি দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহর পুরুলিয়ার নীলকুঠি ডাঙার এসএউসিআই কার্যালয় থেকে মিছিল করে জেলা প্রশাসনিক ভবনে মনোনয়ন জমা দিলেন৷ ষষ্ঠ দফায় অর্থাৎ আগামী ১২ মে ভোটে বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর প্রথম দিনই খেতমজুর পরিবারের রঙ্গলাল তাঁর নিজস্ব প্রোফাইল নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েই নজর কাড়লেন ভোট বাজারে।
এসএউসিআই-র এই কমরেড বর্তমানে দলের জেলা কমিটির সদস্য। ১৯৯০ সাল থেকে তিনি পার্টির হোলটাইমার। ফলে শহরের নীলকুঠি ডাঙায় দলের জেলা কার্যালয়ই তাঁর ঘর। আড়শা ব্লক সদরের বাসিন্দা রঙ্গলাল ছাত্রজীবন থেকে এসএউসিআই-র রাজনীতিতে হাতেখড়ি। স্কুলে ইংরাজি চালুর দাবি-সহ স্থানীয় সমস্যা নিয়ে ১৯৮৬ সাল থেকে সিপিএমের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই শুরু করেন। ২০০৯ সালে বাসভাড়া-সহ শিক্ষা সংক্রান্ত নানা দাবি নিয়ে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিতে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন৷ তৎকালীন বাম সরকারের দায়ের করা সেই মামলা আজও চলছে। পুলিশের লাঠি খেয়েছেন কতবার। সিপিএমের পর বর্তমানে তাঁর প্রতিপক্ষ তৃণমূল।
রঙ্গলালবাবুর কথায়, ‘নির্বাচনে লড়ার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাটা শুধুই নিয়ম। একজন প্রার্থী সত্তর লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারবে, এটা একেবারেই হাস্যকর। কতজন কত কোটি টাকা খরচ করে ফেলছে নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন না করেই। তাই কমিশনের এই সব নিয়মে আমি বিশ্বাসী নই। ভোটটা মানুষ দেবেন ভালবেসে। সেখানে লক্ষ–লক্ষ টাকা খরচের কী প্রয়োজন?’ মনোনয়ন পেশ করে রঙ্গলাল যখন এই কথা বলছেন, তখন হাঁ করে তাঁর দিকেই চেয়ে আছেন জেলা প্রশাসনিক ভবনের কর্মীরা। প্রচারে বেরিয়ে হ্যান্ড মাইক হাতে প্রার্থী বলছেন, ‘রাজ্যজুড়ে মদ নিষিদ্ধ করতে ভোট দেবেন কোনখানে?’ উত্তর আসছে, ‘রঙ্গলাল কুমার নামের মাঝখানে।’ কিন্তু অভিজ্ঞমহল সংশয়ী৷ অন্যান্য দলের এত বর্ণাঢ্য প্রচার, এত অর্থ খরচের মাঝে কি দাগ কাটতে পারবেন মাটির মানুষ রঙ্গলাল কুমার?
ছবি: সুনীতা সিং
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.