ধীমান রায়, কাটোয়া: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে প্রায় দু’যুগের প্রাচীন একটি বিশাল কদমগাছ। সুবিশাল সেই মহীরুহে বাসা বেঁধেছে পাখির দল। পড়ুয়ারা গাছতলাতেই ছুটে বেড়ায়। পাখির কলকাকলির সঙ্গে মিশে যায় কচিকাঁচা পড়ুয়াদের কলরব৷ বর্ধমান গুসকরা পূর্বপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা খেলতে খেলতে দেখতে পায়, কাঠবিড়ালির দল তাদেরই গা ঘেঁষে দৌড়ে গাছ বেয়ে উঠে পড়ছে। আবার গাছ বেয়ে নেমে আসছে। ছোট ছোট পড়ুয়াদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে প্রকৃতির এই ছন্দ একাত্ম হয়ে গিয়েছে ওই গাছটি ঘিরে।
আর এখানেই বাঁধল গন্ডগোল৷ পড়ুয়ারা শোনে, সরকারি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে গিয়ে কাটা পড়তে চলেছে তাদের প্রিয় কদম গাছটি। তখন থেকেই গাছ আঁকড়ে হাউহাউ করে কেঁদেই চলেছে পড়ুয়ারা। তাদের দাবি, এই গাছ কিছুতেই কাটতে দেবে না তারা। আর খুদে পড়ুয়াদের এই আবদারে কার্যত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ১-এর বিডিও চিত্তজিত বসু। কারণ, বিডিও অফিসের সীমানা প্রাচীর তৈরিতেই কাটা পড়ছে কদম গাছটি৷
গুসকরা শহরে আউশগ্রাম ১ বিডিও অফিসের পাশেই পূর্বপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রশাসনিক ভবনটিতে এ যাবৎ সীমানা প্রাচীর ছিল না। অফিস চত্বরের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রশাসন সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তার টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এরই মাঝে প্রশাসনের কাছে স্কুলের পড়ুয়ারা আবেদনপত্র জমা দিয়েছে, গাছটি না কাটার আরজি নিয়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয় গুসকরা পূর্বপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিডিও অফিসের দক্ষিণ দিকের স্কুলটি। এখানে পড়ুয়ার সংখ্যা আপাতত ২১১ জন। স্কুল চত্ত্বরে জায়গা কম থাকায় গাছপালাও তেমন নেই। শুধুমাত্র এই কদম গাছটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। যার তলায় পড়ুয়ারা বিশ্রাম নেয়, খেলাধুলা করে।
আউশগ্রাম ১ বিডিও চিত্তজিত বসু বলেন, ‘অফিসের নিরাপত্তাজনিত কারণে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে পাঁচিল তৈরি করতে গেলে গাছটি কাটা পড়বে। স্কুলকে বলেছি, তার পরিবর্তে স্কুলে কিছু গাছ লাগিয়ে দেওয়া হবে। আমরা পড়ুয়াদেরও বোঝানোর চেষ্টা করছি।’ স্কুলের শিক্ষক বিমল মণ্ডলের কথায়, ‘আমরা প্রশাসনের কাছে আরজি জানিয়েছি,পড়ুয়াদের দিকে তাকিয়ে যেন গাছটি বাঁচিয়ে অফিসের সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়।’ এখন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত আর ছোটদের আবেগ – এই দু’য়ের টানাপোড়েনেই ঝুলে রয়েছে কদম গাছের ভবিষ্যৎ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.