শাহজাদ হোসেন, ফারাক্কা: কেউ বা চুল কেটেছে বলিউডের হালফিলের দাপুটে নায়কের আদলে। কারও আবার পছন্দ দেশি-বিদেশি ক্রীড়াবিদদের চুলের আদল। এসব দেখে তো কার্যত চক্ষু চড়কগাছ হেডস্যর মণিরুল ইসলামের। বিষয়টি কড়া হাতে দমনের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ছাত্রছাত্রীদের নিষেধের পাশাপাশি আরও একধাপ এগিয়ে স্কুল সংলগ্ন সতেরোটি সেলুনেও নোটিস পাঠিয়েছেন তিনি। আগামী বৃহস্পতিবার এ নিয়ে সেলুনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। সম্প্রতি কলকাতার নিউটাউনের হাটগাছা হরিদাস বিদ্যাপীঠেও এই একই দাওয়াই দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। এবার একই পদ্ধতি অবলম্বন করে খবরের শিরোনামে ফরাক্কা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মণিরুল ইসলাম। তাঁর এই উদ্যোগ ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে এলাকায়।
নিউ ফরাক্কা হাই স্কুল। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ২৬৪১জন। শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ৪১ জন। চারজন করে প্যারাটিচার ও শিক্ষাকর্মী রয়েছেন। দীর্ঘ বারো বছর স্কুলে পূর্ণ সময়ের কোনও প্রধান শিক্ষক ছিলেন না। ১৭ জুলাই ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদে যোগ দিয়েছেন মণিরুল ইসলাম। আর এরপরই শিক্ষার মানোন্নয়ন ও স্কুলের পরিবেশ বজায় রাখার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। স্কুলে যোগ দেওয়ার পর ছাত্রদের এই কেতাদূরস্ত চুল কাটার বিষয়টি দেখে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তিনি। ছাত্রদের বারন করার পাশাপাশি তাই এবার স্কুল সংলগ্ন প্রায় সতেরোটি সেলুনে নোটিস পাঠিয়েছেন তিনি। নোটিসে উল্লেখ রয়েছে নাপিতভাইদের আগামী ৮ আগস্ট, বৃহস্পতিবার স্কুলে একটি বৈঠকে থাকতে অনুরোধ করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই বৈঠকেই তিনি নাপিতদের কড়া নির্দেশ দেবেন বলে জানা গিয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ এই পদক্ষেপ কেন? জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে প্রধান শিক্ষক না থাকায় কিছুটা বলেও বিঘ্নিত হয় স্কুলের পরিবেশ। ক্লাস চলাকালীনই ছাত্রছাত্রীদের একাংশ মোবাইলে হিন্দি গান চালিয়ে স্কুলের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করে। শিক্ষক-শিক্ষিকা নিষেধ করলেও তাতে কর্ণপাত করেনি তারা। এমনকী বদলে যেতে থাকে তাদের কেশবিন্যাশও। হাল ফ্যাশনের ধাঁচে চুল কেটে স্কুলে আসতে শুরু করে তারা। দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিষয়টি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নেন প্রধান শিক্ষক মণিরুল। এমনকী ক্লাসে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের মোবাইল ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “স্কুলে যোগ দিয়ে করে প্রথমদিন হঠাৎ ক্লাসে গিয়ে কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর বিভিন্ন ধাঁচে চুল কাঁটার আদল দেখে চমকে উঠি। দেখি ক্লাসেই মোবাইল ব্যবহার করছে তারা। নজরে আসতেই শিক্ষার পরিবেশকে সুষ্ঠু করতে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়। স্কুলে নাপিত নিয়ে এসে চুল ছাঁটার বার্তাও দেওয়া হয়। তারপরেই স্কুলজুড়ে ক্লাসে ক্লাসে আধুনিক ধাঁচের চুল কাটাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয় লাগোয়া সতেরোটা নাপিতকে লিখিত আকারে চিঠি পাঠিয়ে ডাকা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে উপযুক্ত শিক্ষাদানের পাশাপাশি তাদের জীবন চর্চার মান গড়ে তুলতে পারাও শিক্ষক হিসাবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ওরা আমাদের সন্তানতুল্য। তাদের মানুষ করে গড়ে তোলাই আমাদের কাজ। শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রী নয় শিক্ষক ও শিক্ষিকারা ক্লাস চলাকালীন কোন মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন না সে বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্কুল পরিচালন সমিতি ও অভিভাবকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.