দীপঙ্কর মণ্ডল: বাংলার ছেলেমেয়েরা যেমন ভিন রাজ্যে লকডাউনের কবলে, একইভাবে ভিন রাজ্য থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরাও এখানকার বিভিন্ন হোস্টেলে আটকে আছেন। এই করোনার আবহে কী করছেন তাঁরা, কেমন আছেন? এমন নানা দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন ভিন রাজ্যের অভিভাবকরা। পূর্ব বর্ধমানের একটি কলেজ ছাত্রছাত্রীদের নাচের ভিডিও পাঠিয়ে অভিভাবকদের আশ্বস্ত করছে, “চিন্তা করবেন না, বাংলায় ভালো আছে তাদের বাড়ির ছেলে মেয়েরা”।
পূর্ব বর্ধমানের এন এস পলিটেকনিক। কলেজের হোস্টেলে আটকে ত্রিপুরার ১১০ জন ছাত্রছাত্রী। সঙ্গে আছে ফালাকাটা, মালদহ, বালুরঘাট, মুর্শিদাবাদ,বীরভূম-সহ বিভিন্ন জেলার পড়ুয়ারা। আছেন বিভিন্ন জেলা ও বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। লকডাউনে তারা পুরোপুরি হোস্টেলবন্দি, বাইরে বেরনো বন্ধ, বাইরে থেকে কাউকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এমতাবস্থায় কী করছেন তাঁরা? কারিগরি শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে অভিনব উপায় বের করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা চলছে যোগব্যায়াম ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যে যার মতো নৃত্য এবং সংগীত পরিবেশন করছেন। কোনও ভেদাভেদ নেই। ছাত্রছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকারা মিলিতভাবে আনন্দে থাকার চেষ্টা করছেন। কলেজের অধ্যক্ষ মলয় পিট জানিয়েছেন, “চলতি সপ্তাহে আমরা বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উদযাপন করছি। পৃথিবী ক্রমশ প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারাচ্ছে। বৃক্ষরোপণ ছাড়া পথ নেই। একইসঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসের ভিতরে শাকসবজির চাষও করছে। দু’বেলা নিয়ম করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। যোগব্যায়াম চলছে। এমন কর্মসূচির ফলে সবার মধ্যে আরও বেশি করে ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হচ্ছে।”
করোনা সতর্কতায় গোটা দেশে লকডাউন চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থা গতিহীন হয়ে পড়েছে। দিশাহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে ছাত্রছাত্রীরা। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সবাই। সকলের উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। মানবজীবনে করোনা সংক্রমণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব অবশ্যম্ভাবী, একথা মাথায় রেখে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন -পূর্ব বর্ধমানের এন এস পলিটেকনিক কলেজ, গোবিন্দপুর শেফালী মেমোরিয়াল পলিটেকনিক, বীরভূমের শান্তিনিকেতন ইনস্টিটিউট অফ পলিটেকনিক সহ বেশ কয়েকটি আইটিআই, বিএড এবং ডিএড কলেজ কতৃপক্ষ বেশকিছু সময়োপযোগী ও অভিনব পদক্ষেপ শুরু করছে।
কারিগরি শিক্ষা দফতর জানিয়েছে দৈনন্দিন ক্লাস বন্ধ থাকলেও, ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে গোটা রাজ্যে চলছে ই-লার্নিং। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে এই অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা সকলের কাছেই খুবই আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।” তাঁর বক্তব্য, চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়তে চলেছে সারা বিশ্ব। অদূর ভবিষ্যতে কর্মচ্যূত হতে চলেছে অগণিত মানবসম্পদ। অচিরেই দিশা হারিয়ে ঘরে ফিরবেন অনেকে। সেইসব শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ মানসম্পদকে কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন মলয়বাবু। তিনি বলেন, “যৌথভাবে ক্লাস্টার গঠন করে ক্ষুদ্র বা মাঝারি মানের শিল্প, উৎপাদনাত্মক প্রকল্পের মাধ্যমে চাকরি খোওয়ানোদের পথ দেখাতে হবে। আমরা বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়েছি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা, অত্যাবশ্যক কারিগরি পরিষেবা ইত্যাদির মাধ্যমে তাঁরা যাতে স্বনির্ভর হতে পারেন, তার সমান্তরাল অভিমুখীকরণ ও প্রশিক্ষণের কাজ চলছে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য ই-লার্নিংয়ের মাধ্যমে ধারাবাহিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা এবং প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের জন্য এই অভিনব পরিকল্পনা সবার মনে আশার সঞ্চার করছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.