সৌরভ মাজি, বর্ধমান: কখনও কোলে বসিয়ে শিক্ষা দেন। আবার কখনও শাসনও করেন। ছাত্রদের উপর এমনই অধিকার থাকে শিক্ষকশিক্ষিকাদের। সেই অধিকারবোধ থেকেই দুষ্টুমি করায় এক ছাত্রকে চড় মেরেছিলেন শিক্ষক। আর এই অপরাধে ক্লাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের সামনে ওই শিক্ষককে ব্যাপক মারধর করলেন ওই ছাত্রের বাবা। জামার কলার ধরে মারতে মারতে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। এমনকী, লাঠি দিয়েও পেটানো হয়। প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা গিয়েও আটকাতে পারেননি। মিড ডে মিলের রাঁধুনি কয়েকজনকে ডেকে ওই ছাত্রের বাবার মাথায় জল ঢেলে শান্ত করেন। এক ছাত্রের বাবার এমন আচরণের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন গ্রামবাসী ও পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। শিক্ষক পেটানোর ঘটনার গ্রামের বদনাম হয়ে গেল বলে জানান তাঁরা।
মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে নবাবহাট অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জখম শিক্ষক মৈনাক মুখোপাধ্যায়কে স্থানীয়রাই চিকিৎসার ব্যবস্থা করান। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে হাতের এক্স-রে করানো হয়। ওষুধপত্রও দেওয়া হয়েছে। আর অভিযুক্ত অভিভাবক আসগর আলিও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন পরে। তিনি বলেন, “আমার ছেলের কানের গোড়ায় চড় মারার দাগ দেখে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। তাই এমন অন্যায় করে ফেলেছি। এখন বুঝতে পারছি মাথা গরম করে ফেলায় কত বড় অনুচিত কাজ করেছি আমি। ওই শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব।” স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রীনা দে জানান, এই ধরনের ঘটনায় তাঁরা নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন। তবে অন্য অভিভাবকরা পাশে রয়েছেন তাঁদের। পূর্ব বর্ধমান জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) নারায়ণচন্দ্র পাল বলেছেন, “গ্রামবাসীরাই অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছেন। গ্রামবাসীরা শিক্ষক ও স্কুলের পাশে রয়েছেন। অভিযুক্ত অভিভাবকও ক্ষমা চেযেছেন।” তাই তাঁরা আইনের পথে যাচ্ছেন না। আক্রান্ত শিক্ষকের বাড়ি বর্ধমান শহরের বড়নীলপুর এলাকায়। এদিন সেখানে গেলেও তিনি বা পরিবারের কেউ সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে দেখা করেননি।
এদিন এই ঘটনার জেরে স্কুলের পড়ুয়ারা কেউ ভয়ে মিড ডে মিলও ঠিকভাবে খেতে পারেনি। রাঁধুনি শেখ ফজিলা বলেন, “দুপুরবেলায় এসে এমনভাবে মারতে শুরু করে স্যারকে আমরা বুঝতেই পারিনি। আমরা ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারিনি। দৌড়ে সামনের ১০৮ শিবমন্দিরের সামনে গিয়ে কয়েকজনকে ডেকে আনি। ততক্ষণে স্যারকে মারতে মারতে বাইরে নিয়ে এসেছে ওই অভিভাবক। মাথা গরম দেখে তার মাথায় জল ঢেলে দিই আমরা। তার পর শান্ত হয়।” ফজিলা আরও জানান, শিশুশ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের কোলে বসিয়ে পড়ান। আবার দুষ্টুমি করলে শাসন করেন। তাই বলে শিক্ষককে কেউ মারধর করবে তা তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। গ্রামবাসীরাও জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা তাঁরা বরদাস্ত করবেন না। আসগরকে তাঁরা তা সমঝেও দিয়েছেন। এক গ্রামবাসী বলেন, “আসগর এই গ্রামের আদি বাসিন্দা নয়। এখানকার জামাই। এখানে থাকে এখন। ওর জন্য গ্রামের বদনাম হয়ে গেল।”
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা জানান, স্কুলে তিনজন শিক্ষক। এদিন একজন ছুটিতে ছিলেন। তিনি ও মৈনাকবাবু ক্লাস নিচ্ছিলেন আলাদা আলাদা ঘরে। শিশুশ্রেণীর একছাত্রকে কোনও কারণে হয়তো চড় মেরেছিলেন ওই শিক্ষক। তার কিছু পরে তার বাবা এসে ওই শিক্ষককে গালিগালাজ করেত থাকে। তাঁরা গিয়ে দেখেন তখন মৈনাকবাবুকে মারধর শুরু করেছেন ওই অভিভাবক। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও জানিয়েছে, তারাও ভয় পেয়ে গিয়েছে। তারাও জানিয়েছে, ওই শিক্ষক খুব ভাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.