Advertisement
Advertisement
Bardhaman

কাঠগড়ায় ধর্ষণে অভিযুক্ত ‘প্রিয়’ স্যর, বাইরে কেঁদে আকুল ছাত্রছাত্রীরা, বেনজির ছবি বর্ধমানে

একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করে।

Students cried as favorite teacher sent to jail in POCSO case in Bardhaman
Published by: Paramita Paul
  • Posted:November 12, 2024 8:02 pm
  • Updated:November 12, 2024 8:44 pm  

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: সকাল ১০টা থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে। প্রিজন ভ্যানে এক ঝলক দেখেই শতাধিক পড়ুয়ার চিৎকার ‘স্যর আমরা পাশে আছি।’ বিকেলে আদালতে হাজিরা দিয়ে ফের পুলিশ ভ্যানে ওঠার সময় একইরকম চিৎকার। তার পরই পরস্পরের বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে অনেকে। হাউহাউ করে কাঁদতে থাকা সেই সব কিশোর-কিশোরী ধর্ষণে অভিযুক্ত স্যরের ছাত্রছাত্রী। সেই স্যরের জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে পকসো আদালতে। স্যরকে জেলে থাকতে হবে। তাঁর জন্য পড়ুয়াদের ওইভাবে কান্নাকাটি করতে দেখে থমকে দাঁড়ান অনেকে। গুঞ্জন ওঠে, ধর্ষণের অভিযুক্তর জন্য এইভাবে এতজনকে কান্নাকাটি করতে কোনওদিন দেখা গিয়েছে কি না। মঙ্গলবার বিরল ঘটনার সাক্ষী বর্ধমান আদালত চত্বর।

বর্ধমানের পাড়াপুকুর এলাকার একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষক শুভব্রত দত্ত। ওই কোচিং সেন্টারেরই এক প্রাক্তন ছাত্রী তথা একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করে। অভিযোগ, ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে গিয়ে গত মে ও আগস্ট মাসে ওই শিক্ষক তাকে ধর্ষণ করেছে। গত ৩০ অক্টোবর ওই শিক্ষকের কোচিং সেন্টারে গিয়ে ছাত্রীর পরিবারের লোকজন তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। পরে বর্ধমানের মহিলা‌ থানার পুলিশ গিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন বর্ধমান সিজেএম আদালতে পেশ করা হলে বিচারক জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে পকসো আদালতে পেশ করতে নির্দেশ দেন। পরে পকসো আদালতে পেশ করে দুদিনের পুলিশি হেফাজতে নেয় মহিলা থানার পুলিশ। পুলিশি হেফাজত শেষে পকসো আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ১২ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার ওই শিক্ষকের জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল।

Advertisement

এর আগে যতবার আদালতে অভিযুক্তকে পেশ করা হয়, ততবারই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আদালত চত্বরে ঠায় অপেক্ষা করেছে কয়েকশো ছাত্রছাত্রী। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি ছাত্রছাত্রীরা অপেক্ষা থেকেছে আদালতের নির্দেশের। এদিনও সকাল থেকেই পড়ুয়া ভিড় করেছিল আদালত চত্বরে। তীব্র রোদে রাস্তার ধারে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছে। ভিড় করেছিলেন অভিভাবকরাও। অনেকেই এদিন স্কুল কামাই করেছে স্যরের জন্য। অনেকে আবার স্কুল ছুটির পর বিকেলে এসেছিল আদালতে। এদিন জামিনের আবেদনের শুনানি থাকায় ছাত্রছাত্রীরা আশা করেছিল, স্যর জেল থেকে ছাড়া পাবে। এদিন পকসো আদালতে প্রথম পর্বে শুনানি হয়। দ্বিতীয় পর্বে জামিন‌ নাকচের কথা জানান বিচারক। সেই খবর বাইরে আসতেই মুখ ম্লান হয়ে যায় তাদের। কিন্তু আদালত চত্বর ছাড়েনি কেউ। আদালত থেকে বের করে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় হাত তুলে তারা চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘স্যর, স্যর আমরা সবাই পাশে আছি’। স্যরও প্রিজন ভ্যানের জানালার জালের কাছে হাত রেখে নাড়তে থাকেন।

মাঝে পুলিশ ভ্যানকে রাস্তা করে দিতে এক আধিকারিককে চিৎকার করে সরে যেতে বলতে শোনা যায়। রাস্তা করে দিয়ে প্রিজন ভ্যানের দিকে হাত তুলে সমস্বরে চিৎকার চলতেই থাকে। ভ্যান বেরিয়ে যেতেই হাউহাউ করে কান্না শুরু করে দেয় কিশোর-কিশোরীর দল। তাদের বিশ্বাস, “স্যর কোনও অপরাধ করতে পারে না। আইন মেনে বিচার হবে। সুবিচার একদিন তারা পাবেই।” অভিভাবকরাও অভিযুক্ত শিক্ষককে সুবিচার দিতে আইনি সহায়তা দিতে কোমর বেঁধেছেন। তাঁদের কথায়, “আদালতের নির্দেশ শিরোধার্য। আইন মেনে বিচার চলছে। আমরা শিক্ষকের পাশে থাকব। আইনি মেনে লড়াই চলবে। তার পর আদালতে দোষী প্রমাণ হলে সাজা হবে। দোষ না করলে সাজা হবে না, এটাও আমরা বিশ্বাস করি।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement