Advertisement
Advertisement

Breaking News

Kharagpur

বেলদায় পাঠাগার থেকে ২৮ বস্তা বই চুরি অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ার! তাজ্জব পুলিশ

১৩ থেকে ১৪ দিন ধরে গ্রন্থাগার থেকে বই চুরি করেছে ওই পড়ুয়া।

Student steal 28 bags of books from the library in Kharagpur

উদ্ধার হয়েছে চুরি যাওয়া কিছু বই। ছবি: সৈকত সাঁতরা।

Published by: Subhankar Patra
  • Posted:November 6, 2024 4:08 pm
  • Updated:November 6, 2024 7:09 pm  

অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: বাবা দিনমজুর। যা রোজগার করেন সব নেশা করে উড়িয়ে দেন। মা পরিচারিকার কাজ করেন। ঘরে ছোটো বোন রয়েছে। মা যা রোজগার করেন তাতেই পরিবারের কোনওরকমে দিন গুজরান হয়। নিত্য অভাব পরিবারে। বয়স সন্ধিক্ষণে একটি ছেলের যা কিছু চাহিদা তার কিছুই পূরণ হয় না। কারণ মায়ের সেই রোজগার নেই যা দিয়ে এই নাবালকের চাহিদা পূরণ হবে। একদিকে অভাব। অপরদিকে চাহিদা পূরণের আকাঙ্খা! এই দুইয়ের মাঝে পড়ে শেষ পর্যন্ত অষ্টম শ্রেণিতে পাঠরত এক নাবালক পাড়ার একটি সরকার পোষিত গ্রন্থাগার থেকে ২৮ বস্তা ভর্তি প্রায় ২১০০টি বই চুরি করল! তবে, বই পড়ার আগ্রহে নয়। চুরি করে কিলো দরে বইগুলি বিক্রি করে। যা পাওয়া যাবে সেই দিয়ে নিজের চাহিদার কিছুটা পূরণ করার তাগিদে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর সামনে এল একসঙ্গে এত বই চুরির রহস‌্য।

বেলদা থানার জোড়াগেড়িয়া ফাঁড়ির জাহালদা এলাকায় রয়েছে সরকার পোষিত এই গ্রন্থাগারটি। আজ থেকে ৭৬ বছর আগে ১৯৪৮ সালে জাহালদা সাধারণ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা হয়। আগে পাঠকের সংখ্যা প্রচুর ছিল। এখন আর কেউ এই পাঠাগারে তেমন কেউ আসেন না। গ্রন্থাগারিক বিপ্লব মণ্ডল জানালেন, “গত ছয় মাসে একজন পাঠকও গ্রন্থাগারে আসেননি। তবে বইয়ের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এখানে প্রায় চার হাজারের মত বই রয়েছে। আর বইগুলি পাঁচটি র‌্যাকে ও ছয়টি আলমারিতে ঠাসা ছিল। এছাড়া রয়েছে কম্পিউটার-সহ কিছু মূল্যবান সামগ্রী। কিন্তু এই নাবালক র‌্যাকে রাখা বইগুলি রাতে চুপিসারে নিয়ে গিয়ে কাছেই এক গুদাম মালিকের কাছে বিক্রি করেছে। প্রতি কিলোতে সে ১০ টাকা করে পেয়েছে। তবে একদিনে সে এতগুলো বই চুরি করেনি।”

Advertisement

জানা গিয়েছে, পুজোর ছুটির মধ্যে রীতিমত গ্রন্থাগারের পিছনের দরজার তালা ভেঙে ১৩ থেকে ১৪ দিন ধরে সে বইগুলি চুরি করেছে। প্রতিবারই সে দুটি বস্তায় বইগুলো ভরে একটি সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে যেত পাড়ার সেই গুদাম মালিক আব্দুল আদুত আলি শায়ের কাছে। প্রথমদিন যখন এই নাবালক দুটি বস্তায় ভরে গুদাম মালিকের কাছে বইগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে যায় সেদিন কিছুটা হলেও অবাক হয়েছিলেন গুদাম মালিক আব্দুল। বইগুলি বিক্রি করে নাবালক ২৫০ টাকা পায়। সেই টাকা দিয়ে সে পুজোর সময় দোকানে ভালোমন্দ খাবার খেয়েছে।

পরে নাবালক যখন ফের দুটি বস্তা বোঝাই করে বই নিয়ে যায় সেই গুদাম মালিকের কাছে তখন তিনি আর অবাক হননি। অভিযোগ, সেই গুদাম মালিক তার পর থেকে এই নাবালককে নিজের গুদাম থেকে বস্তা দিয়ে উৎসাহিত করতে শুরু করেন। বাধা তো দেননি। কিশোর মনে চলতে থাকা এই অপরাধের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেননি। উলটে নাবালককে উৎসাহিত করতে শুরু করেন। এইভাবে নাবালক লাগাতার ১৩ থেকে ১৪ দিন ধরে গ্রন্থাগার থেকে বই চুরি করে গিয়েছে।

শনিবার জোড়াগেড়িয়া ফাঁড়িতে গ্রন্থাগারিক বিপ্লব মণ্ডল অভিযোগ দায়ের করার পর পুলিশ প্রথমে গ্রেপ্তার করে গুদাম মালিক আব্দুল আদুত আলি শা-কে। সোমবার তাকে দাঁতন এসিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। তিনদিনের হেফাজতে নিয়ে তাকে জেরা করতেই এই নাবালকের নাম পায় পুলিশ। যা শুনে তাজ্জব বনে যান তদন্তকারীরা। বই চুরিতে হাত পড়ুয়ার!

তদন্তে ওই ছাত্রর নাম পাওয়ার পর পুলিশ গুদামের সামনে রাখা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়। সোমবার রাতে নাবালককে আটক করে। তার সঙ্গে আরও কিছু বই উদ্ধার করে। মঙ্গলবার ধৃত নাবালককে মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটিতে জুভেনাইল আদালতে হাজির করা হয়। তার আপাতত ঠাঁই হয়েছে ডেবরা হোমে।

এদিকে গ্রন্থাগারিক বিপ্লব মণ্ডল জানিয়েছেন, “চুরি হওয়া বইয়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি দুষ্প্রাপ্য বই রয়েছে। তেমনই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-সহ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও আরও বহু লেখকের গল্প, উপন্যাস রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে কিছু পাঠ্যবই ও চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির নানা বই।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement