Advertisement
Advertisement

Breaking News

সামাজিক বয়কট

কোটা থেকে ফিরে নয়া বিপদ, হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকেও সামাজিক বয়কটের মুখে ছাত্রী

রাজস্থানের কোটা থেকে হুগলির উত্তরপাড়ায় ফিরেছেন মেধাবী ছাত্রী।

Student returning from Kota, Rajsthan faces social stigma at homeland
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:May 3, 2020 9:36 pm
  • Updated:May 4, 2020 9:31 am  

দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: দীর্ঘ অপেক্ষার পর নিজের ঘরে ফিরেছেন। মহামারির আতঙ্ক কাটিয়ে এবার মা-বাবার নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে থাকার কথা। কিন্তু তা হল কই? রাজস্থানের কোটা থেকে সরকারি বাসে ফেরার পর থেকে রীতিমত সামাজিক বয়কটের মুখে পড়তে হল হুগলির ছাত্রী সৌম্যা উপাধ্যায়কে। পাড়া-প্রতিবেশীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মেনে নিতে হচ্ছে তাঁর মাকেও। উত্তরপাড়ার মাখলা মাকালতলার ঝিলপাড়ের বাসিন্দা সৌম্যা কাঁদতে কাঁদতে বলছে, ”এর থেকে আমার কোটায় থেকে যাওয়াই ভাল ছিল। কেন ফিরে এলাম বাড়ি?”

সৌম্যার মা অনিতা অধিকারী রাখি তৈরির কাজ করেন। বাবা কর্মসূত্রে সুরাটে থাকেন। মেধাবী সৌম্যাকে নিয়ে বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন। মেয়েকে কোটা মেডিক্যালের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পড়তে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এরই মাঝে হঠাৎই করোনার জেরে ২৫ মার্চ থেকে দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা হয়ে যায়। তারপর থেকেই এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত সরকারি সহযোগিতায় বাড়ি ফিরতে পারে সৌম্যা। সে জানায়— “শেষের দিন পনেরো ছ’তলা বিল্ডিংয়ের হস্টেলে তারা মাত্র তিন জন মেয়ে ছিল। বাকিরা সবাই যে যার বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। রীতিমতো ভয় লাগছিল। ভাবছিলাম, মায়ের সাথে বোধহয় আর দেখা হবে না, বাড়ি ফিরতে পারব না। এখানেই মরে যাব। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের ফেরার জন্য ব্যবস্থা করেছেন, তা টুইটে জানতে পেরে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে শত কোটি প্রণাম।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: মতভেদ অতীত, হাতে হাত মিলিয়ে ত্রাণ বিলি বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের নেতাদের]

তিনদিন, তিন রাত বাস জার্নির পর যখন মাকালতলা দাসপাড়ায় এসে পৌঁছায় বছর উনিশের এই ছাত্রী, তখন যে এরকম ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হবে, তা ভাবতেও পারেন সৌম্যা। দাসপাড়ায় ভোরেই হাজির হয়ে যায় এলাকার বেশ কয়েকটি ছেলে। তারা রীতিমতো মারমুখী মেজাজে জানায় যে সৌম্যাকে পাড়ায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। ফলে মোড়েই ঠায় দু’ঘন্টা বসে থাকার পর পুর চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় বাড়ি ফেরে সে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে নিজের মাকেও লাগেজ ছুঁতে দেয়নি সে। জানায়, তার লাগেজ সে নিজেই বয়ে নিয়ে যাবে। বাড়িতে সে কোয়ারেন্টাইনে থাকবে। কিন্তু বাড়িতে ঢোকার পর সৌম্যা ও তার মাকে রীতিমতো তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

হোম কোয়ারেন্টাইনে ছাত্রী

বাড়িতে খাবার জল যে দিয়ে যায়, তাকে পর্যন্ত জল দিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। পাতকুয়ো থেকে জল তুলে ফুটিয়ে খেতে হয়েছে। পরে স্থানীয় পুরসভার চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে বাড়িতে জল দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। সৌম্যা জানায় যে সে নিজেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে বাড়ির স্টোর রুমে রয়েছে, যাতে তার মায়ের সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগ না হয়। কিন্তু স্টোর রুমের জানলা খুললেই এলাকার কিছু ছেলে তার উদ্দেশে গালিগালাজ করছে। তাই জানলাও খুলতে পারছে না। এখানে আসার পর চিকিৎসক তার শারীরিক পরীক্ষার পর ফিট সার্টিফিকেটও দিয়েছে। তবু সমস্যা মিটছে না।

[আরও পড়ুন: কম যাত্রীতে হবে না লাভ, গ্রিন জোনে বাস চালাতে নারাজ মালিকরা]

অনিতাদেবীও বাড়ির বাইরে বেরতে পারছেন না দোকান,বাজার করার জন্য। এই মূহুর্তে সৌম্যার ইমিউনিটি ট্যাবলেটের জন্য মেডিক্যাল স্টোরে অর্ডার করা হলেও, সেখান থেকে বলা হয়েছে, কেউ এসে যেন নিয়ে যায়। কিন্তু বাড়ির বাইরে বেরতে না পারলে, ওষুধ আনবে কীভাবে? বলতে বলতে কেঁদে ফেলে সৌম্যা। শেষে কাঁদতে কাঁদতে বলে—“ এর থেকে আমি কোটাতেই ভাল ছিলাম। ওখান থেকে না ফিরে এলেই ভাল হত। আজকে আমার ফিরে আসার জন্য আমার মাকে এত সমস্যা যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে। আমি এটা আর সহ্য করতে পারছি না। কেউ অন্তত আমাদের এই অসহায় অবস্থা থেকে উদ্ধার করুক।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
News Hub